পাতা:মহাভারত - উপক্রমণিকাভাগ - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পৌষ্যপর্ব্ব।
৭৫

নিকট নিবেদন করিলেন, ভগবন্! সর্বদা সৎপাত্র সংযোগ ঘটে না। আপনি অতি গুণবান্ অতিথি উপস্থিত হইয়াছেন, অতএব অতিথ্য করিতে চাই, ক্ষণকাল অপেক্ষা করুন। উতঙ্ক কহিলেন, ভাল, অপেক্ষা করিলাম, কিন্তু তুমি সত্বর হইয়া যাহা উপস্থিত আছে, তাহাই আনয়ন কর। তদনুসারে তিনি, যে অম্ল উপস্থিত ছিল, তাহাই অনিয়া তাঁহাকে ভোজন করিতে দিলেন। উতঙ্ক সেই অশ্ন কেশসংস্পর্শদূষিত ও শীতল দেখিয়া অশুচি বোধ করিয়া কহিলেন, তুমি আমাকে অশুচি অল্প দিলে, অতএব অন্ধ হইবেক। শাপ শুনিয়া পৌষ্য কহিলেন, অদুষ্ট অন্ন দূষিত কহিতেছ, অতএব তুমি নির্বংশ হইবে। তখন উতঙ্ক কহিলেন, অশুচি অন্ন আহার করিতে দিয়া পুনর্বার অভিশাপ দেওয়া উচিত নহে; তুমি বরং অন্ন প্রত্যক্ষ কর। অনন্তর পৌষ স্বচক্ষে সেই অম্নের অশুচি ভাব প্রত্যক্ষ করিলেন।

 এই রূপে সেই অম্নের অশুচিত্ব প্রত্যক্ষ করিয়া পৌষ্য উতঙ্ককে অনুনয় করিতে লাগিলেন, ভগবন্! আমি না জানিয়া এই কেশসংস্পর্শদূষিত শীতল অন্ন আনিয়াছি, অতএব ক্ষমা প্রার্থনা করিতেছি; এই অনুগ্রহ করুন, যেন অন্ধ না হই। উতঙ্ক কহিলেন, আমার কথা মিথ্যা হয় না; অতএব এক বার অন্ধ হইয়া অতি ত্বরায় অন্ধত্বদোষ হইতে মুক্ত হইবে। আর তুমি আমাকে যে শাপ দিয়াছ, তাহা কিন্তু যেন না ফলে। পৌষ্য কহিলেন, আমি শাপ সংবরণে সমর্থ নহি; এখন পর্যন্তও আমার কোপোপশম হয় নাই। আপনি কি ইহা জানেন না যে, ব্রাহ্মণের হৃদয় নবনীতের ন্যায় কোমল; তাঁহার বাক্য তীক্ষ্ণধার ক্ষুরের ন্যায়। কিন্তু ক্ষত্রিয়ের এই দুই বিপরীত; তাহার বাক্য নবনীত ও হৃদয় তীক্ষধার ক্ষুর।