পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৪
মহাভারত

কর্তব্য। পুরোহিত না থাকলে কোনও রাজা কেবল বীরত্ব বা আভিজাত্যের প্রভাবে রাজ্য জয় করতে পারেন না। ব্রাহ্মণকে পুরোভাগে রাখলেই চিরকাল রাজ্যপালন করা যায়।

৩০। তপতী ও সংবরণ

 অর্জুন প্রশ্ন করলেন, তুমি আমাকে তাপত্য বললে কেন? তপতী কে? আমরা তো কৌন্তেয়। গন্ধর্বরাজ এই ত্রিলোকবিশ্রুত উপাখ্যান বললেন।—

 যিনি নিজ তেজে সমস্ত আকাশ ব্যাপ্ত করেন সেই সূর্যের এক কন্যার নাম তপতী, ইনি সাবিত্রীর কনিষ্ঠা। রূপে গুণে তিনি অতুলনা ছিলেন। সূর্যদেব এমন কোনও পাত্র খুঁজে পেলেন না যিনি তপতীর উপযুক্ত। সেই সময়ে কুরুবংশীয় ঋক্ষপুত্র সংবরণ রাজা প্রত্যহ উদয়কালে সূর্যের আরাধনা করতে লাগলেন। তিনি ধার্মিক, রূপবান ও বিখ্যাত বংশের নৃপতি, সেজন্য সূর্য তাঁকেই কন্যা দিতে ইচ্ছা করলেন। একদিন সংবরণ পর্বতের নিকটস্থ বনে মৃগয়া করতে গেলে তাঁর অশ্ব ক্ষুৎপিপাসায় পীড়িত হয়ে ম’রে গেল। সংবরণ পদব্রজে বিচরণ করতে করতে এক অতুলনীর রূপবতী কন্যা দেখতে পেলেন। তিনি মুগ্ধ হয়ে পরিচয় জিজ্ঞাসা করলেন, কিন্তু সেই কন্যা মেঘমধ্যে সৌদামিনীর ন্যায় অন্তর্হিত হলেন। রাজা কামমোহিত হয়ে ভূমিতে প’ড়ে গেলেন, তখন তপতী আবার দেখা দিয়ে বললেন, নৃপশ্রেষ্ঠ, উঠুন, মোহগ্রস্ত হবেন না। সংবরণ অস্পষ্ট বাক্যে অনুনয় ক’রে বললেন, সুন্দরী, তুমি আমাকে ভজনা কর নতুবা আমার প্রাণবিয়োগ হবে। তুমি প্রসন্ন হও, আমি তোমার বশংগত ভক্ত। তপতী বললেন, আপনিও আমার প্রাণ হরণ করেছেন। আমি স্বাধীন নই, আমার পিতা আছেন। আপনি তপস্যায় তাঁকে প্রীত ক’রে আমাকে প্রার্থনা করুন। এই ব’লে তপতী চলে গেলেন।

 সংবরণ পুনর্বার মূর্ছিত হয়ে প’ড়ে গেলেন। অমাত্য ও অনুচরগণ অন্বেষণ ক’রে রাজাকে দেখতে পেলেন এবং তাঁর মাথায় পদ্মসুরভিত শীতল জল সেচন করলেন। রাজা সংজ্ঞালাভ ক’রে মন্ত্রী ভিন্ন সকলকেই বিদায় দিলেন এবং সেই পর্বতেই ঊর্ধ্বমুখে কৃতাঞ্জলি হয়ে পুরোহিত বশিষ্ঠ ঋষিকে স্মরণ করতে লাগলেন। স্বাদশ দিন অতীত হ’লে বশিষ্ঠ সেখানে এলেন। তিনি যোগবলে সমস্ত জেনে কিছুক্ষণ সংবরণের সঙ্গে আলাপ করে ঊর্ধ্বে চ’লে গেলেন। সূর্যের কাছে এসে বশিষ্ঠ প্রণাম ক’রে কৃতাঞ্জলিপুটে বললেন, বিভাবসু, আপনার তপতী নামে যে