পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব
৭৫

কন্যা আছে তাঁকে আমি মহারাজ সংবরণের জন্য প্রার্থনা করছি। সূর্য সম্মত হয়ে তপতীকে দান করলেন, বশিষ্ঠ তাঁকে নিয়ে সংবরণের কাছে এলেন। সংবরণ তপতীকে বিবাহ করলেন এবং মন্ত্রীর উপর রাজ্যচালনার ভার দিয়ে সেই পর্বতের বনে উপবনে পত্নীর সঙ্গে বার বৎসর সুখে বাস করলেন।

 সেই বার বৎসরে তাঁর রাজ্যে একবিন্দু বৃষ্টিপাত হ’ল না, স্থাবর জঙ্গম এবং সমস্ত প্রজা ক্ষয় পেতে লাগল, লোকে ক্ষুধায় কাতর হয়ে পুত্রকলত্র ছেড়ে দিকে দিকে উদ্‌ভ্রান্ত হয়ে বিচরণ করতে লাগল। বশিষ্ঠ মুনি সংবরণ ও তপতীকে রাজপুরীতে ফিরিয়ে আনলেন, তখন ইদ্র আবার বর্ষণ করলেন, শস্য উৎপন্ন হ’ল। অর্জুন, সেই তপতীর গর্ভে কুরু নানক পুত্র হয়। তুমি তাঁরই বংশে জন্মেছ সেজন্য তুমি তাপত্য।

৩১। বশিষ্ঠ, বিশ্বামিত্র, শক্ত্রি ও কল্মাষপাদ—ঔর্ব—ধৌম্য

 অর্জুন বশিষ্ঠের ইতিহাস জানতে চাইলে গন্ধর্বরাজ বললেন।—বশিষ্ঠ ব্রহ্মার মানস পুত্র, অরুন্ধতির পতি এবং ইক্ষ্বাকু কুলের পুরোহিত। কান্যকুব্জরাজ কুশিকের পুত্র গাধি, তাঁর পুত্র বিশ্বামিত্র। একদা বিশ্বামিত্র সসৈন্যে মৃগয়ায় গিয়ে পিপাসিত হয়ে বশিষ্ঠের আশ্রমে এলেন। রাজার সৎকারের নিমিত্ত বশিষ্ঠ তাঁর কামধেনু নন্দিনীকে বললেন, আমার যা প্রয়োজন তা দাও। নন্দিনী ধূমায়মান অন্নরাশি, সূপ (দাল), দধি, ঘৃত, মিষ্টান্ন, মদ্য প্রভৃতি ভক্ষ্য ও পেয় এবং বিবিধ রত্ন ও বসন উৎপন্ন করলে, বশিষ্ঠ তা দিয়ে বিশ্বামিত্রের সৎকার করলেন। নন্দিনীর মনোহর আকৃতি দেখে বিস্মিত হয়ে বিশ্বামিত্র বশিষ্ঠকে বললেন, আপনি দশ কোটি ধেনু বা আমার রাজ্য নিয়ে আপনার কামধেনু আমাকে দান করুন। বশিষ্ঠ সম্মত হলেন না, তখন বিশ্বামিত্র সবলে নন্দিনীকে হরণ ক’রে কশাঘাতে তাকে নিয়ে যাবার চেষ্টা করলেন। নন্দিনী বললে, ভগবান, বিশ্বামিত্রের সৈন্যদের কশাঘাতে আমি অনাথার ন্যায় বিলাপ করছি, আপনি তা উপেক্ষা করছেন কেন? বশিষ্ঠ বললেন, ক্ষত্রিয়ের বল তেজ, ব্রাহ্মণের বল ক্ষমা। কল্যাণী, আমি তোমাকে ত্যাগ করি নি, যদি তোমার শক্তি থাকে তবে আমার কাছেই থাক।

 তখন সেই পয়স্বিনী কামধেনু ভয়ংকর রূপ ধারণ ক’রে হম্বা রবে সৈন্যদের বিতাড়িত করলে। তার বিভিন্ন অঙ্গ থেকে পহ্ণব দ্রবিড় শক যবন শবর পৌণ্ড্র কিরাত সিংহল বর্বর খশ পুলিন্দ চীন হূন কেরল ম্লেচ্ছ প্রভৃতি সৈন্য উৎপন্ন হয়ে