পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৬
মহাভারত

বিশ্বামিত্রের সৈন্যদলকে বধ না ক’রেও পরাজিত করলে। বিশ্বামিত্র ক্রুদ্ধ হয়ে বশিষ্ঠের প্রতি বিবিধ শর বর্ষণ করলেন, কিন্তু বশিষ্ঠ একটি বংশদণ্ড দিয়ে সমস্ত নিরস্ত করলেন। বিশ্বামিত্র নানাপ্রকার দিব্যাস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করলেন কিন্তু বশিষ্ঠের ব্রহ্মশক্তিযুক্ত যষ্টিতে সমস্ত ভস্মীভূত হ’ল। বিশ্বামিত্রের আত্মগ্লানি হ’ল, তিনি বললেন,

ধিগ্‌বলং ক্ষত্রিয়বলং ব্রহ্মতেজোবলং বলম্।
বলাবলং বিনিশ্চিত্য তপ এব পরং বলম্॥

―ক্ষত্রিয় বলকে ধিক, ব্রহ্মতেজই বল। বলাবল দেখে আমি নিশ্চিত জেনেছি যে, তপস্যাই পরম বল।

 তার পর বিশ্বামিত্র রাজ্য ত্যাগ ক’রে তপস্যায় নিরত হলেন।


 কল্মাষপাদ নামে এক ইক্ষাকুবংশীয় রাজা ছিলেন। একদিন তিনি মৃগয়ায় শ্রান্ত তৃষ্ণার্ত ও ক্ষুধার্ত হয়ে এক সংকীর্ণ পথ দিয়ে চলছিলেন। সেই পথে বশিষ্ঠের জ্যেষ্ঠ পুত্র শক্ত্রিকে আসতে দেখে রাজা বললেন, আমার পথ থেকে স’রে যাও। শক্ত্রি বললেন, ব্রাহ্মণকে পথ ছেড়ে দেওয়াই রাজার সনাতন ধর্ম। শক্ত্রি কিছুতেই স’রে গেলেন না দেখে রাজা তাঁকে কশাঘাত করলেন। শক্ত্রি ক্রুদ্ধ হয়ে শাপ দিলেন, তুমি নরমাংসভোজী রাক্ষস হও। কল্মাষপাদকে যজমান রূপে পাবার জন্য বশিষ্ঠ আর বিশ্বামিত্রের মধ্যে প্রতিযোগিতা ছিল। অভিশপ্ত কল্মাষপাদ যখন শক্ত্রিকে প্রসন্ন করবার চেষ্টা করছিলেন সেই সময়ে বিশ্বামিত্রের আদেশে কিংকর নামে এক রাক্ষস রাজার শরীরে প্রবিষ্ট হ’ল।

 এক ক্ষুধার্ত ব্রাহ্মণ বনমধ্যে রাজাকে দেখে তাঁর কাছে মাংস ও অন্ন চাইলেন। রাজা তাঁকে অপেক্ষা করতে ব’লে স্বভবনে গেলেন এবং অর্ধরাত্রে তাঁর প্রতিশ্রুতি স্মরণ ক’রে পাচককে সমাংস অন্ন নিয়ে যেতে আজ্ঞা দিলেন। পাচক জানালে যে মাংস নেই। রাক্ষসাবিষ্ট রাজা বললেন, তবে নরমাংস নিয়ে যাও। পাচক বধ্যভূমিতে গিয়ে নরমাংস নিলে এবং পাক ক’রে অন্নের সহিত ব্রাহ্মণকে নিবেদন করলে। দিব্যদৃষ্টিশালী ব্রাহ্মণ ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, যে নৃপাধম এই অভোজ্য পাঠিয়েছে সে নরমাংসভোজী হবে।

 শক্ত্রি এবং অরণ্যচারী ব্রাহ্মণ এই দুজনের শাপের ফলে রাক্ষসাবিষ্ট কল্মাষপাদ কর্তব্যজ্ঞানশূন্য বিকৃতেন্দ্রিয় হলেন। একদিন তিনি শক্ত্রিকে দেখে বললেন, তুমি যে শাপ দিয়েছ তার জন্য প্রথমেই তোমাকে খাব। এই ব’লে তিনি