পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব
৭৭

শক্ত্রিকে বধ ক’রে ভক্ষণ করলেন। বিশ্বামিত্রের প্ররোচনায় কল্মাষপাদ বশিষ্ঠের শতপুত্রের সকলকেই খেয়ে ফেললেন। পুত্রশোকাতুর বশিষ্ঠ বহু প্রকারে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন কিন্তু তাঁর মৃত্যু হ’ল না। তিনি নানা দেশ ভ্রমণ ক’রে আশ্রমে ফিরে আসছিলেন এমন সময় পিছন থেকে বেদপাঠের ধ্বনি শুনতে পেলেন। বশিষ্ঠ বললেন, কে আমার অনুসরণ করছে? এক নারী উত্তর দিলেন, আমি অদৃশ্যন্তী, শক্ত্রির বিধবা পত্নী। আমার গর্ভে যে পুত্র আছে তার বার বৎসর বয়স হয়েছে, সেই বেদপাঠ করছে। তাঁর বংশের সন্তান জীবিত আছে জেনে বশিষ্ঠ আনন্দিত হয়ে পুত্রবধূকে নিয়ে আশ্রমের দিকে চললেন।

 পথিমধ্যে কল্মাষপাদ বশিষ্ঠকে দেখে ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁকে খেতে গেলেন। বশিষ্ঠ তাঁর ভীতা পুত্রবধূকে বললেন, ভয় নেই, ইনি কল্মাষপাদ রাজা। এই ব’লে তিনি হুংকার ক’রে কল্মাষপাদকে থামিয়ে তাঁর গায়ে মন্ত্রপূত জল ছিটিয়ে তাঁকে শাপমুক্ত করলেন এবং বললেন, রাজা, তুমি ফিরে গিয়ে রাজ্যশাসন কর, কিন্তু আর কখনও ব্রাহ্মণের অপমান ক’রো না। কল্মাষপাদ বললেন, আমি আপনার আজ্ঞাধীন হয়ে দ্বিজগণকে পূজা করব। এখন যাতে পিতৃ-ঋণ থেকে মুক্ত হ’তে পারি তার উপায় করুন, আমাকে একটি পুত্র দিন। বশিষ্ঠ বললেন, তাই দেব। তার পর তাঁরা লোকবিখ্যাত অযোধ্যাপুরীতে ফিরে এলেন। বশিষ্ঠের সহিত সংগমের ফলে রাজমহিষী গর্ভবতী হলেন, বশিষ্ঠ তাঁর আশ্রমে ফিরে গেলেন। দ্বাদশ বৎসরেও সন্তান ভূমিষ্ঠ হ’ল না দেখে মহিষী পাষাণখণ্ড দিয়ে তাঁর উদর বিদীর্ণ ক’রে পুত্র প্রসব করলেন। এই পুত্রের নাম অশ্মক, ইনি পৌদন্য নগর স্থাপন করেছিলেন।

 বশিষ্ঠের পুত্রবধূ অদৃশ্যন্তীও একটি পুত্র প্রসব করলেন, তাঁর নাম পরাশর। একদিন পরাশর বশিষ্ঠকে পিতা ব’লে সম্বোধন করলে অদৃশ্যন্তী সাশ্রুনয়নে বললেন, বৎস, পিতামহকে পিতা ব’লে ডেকো না, তোমার পিতাকে রাক্ষসে খেয়েছে। পরাশর ক্রুদ্ধ হয়ে সর্বলোক বিনাশের সংকল্প করলেন। তখন পৌত্রকে নিরস্ত করবার জন্য বশিষ্ঠ এই উপাখ্যান বললেন।—

 পুরাকালে কৃতবীর্য নামে এক রাজা ছিলেন, তিনি তাঁর পুরোহিত ভৃগুবংশীয়গণকে প্রচুর ধনধান্য দান করতেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর বংশধর ক্ষত্রিয়দের অর্থাভাব হ’ল, তাঁরা ভার্গবদের কাছে প্রার্থী হয়ে এলেন। ভার্গবদের কেউ ভূগর্ভে ধন লুকিয়ে রাখলেন, কেউ ব্রাহ্মণদের দান করলেন, কেউ ক্ষত্রিয়গণকে দিলেন। একজন ক্ষত্রিয় ভার্গবদের গৃহ খনন ক’রে ধন দেখতে পেলেন, তাতে সকলে ক্রুদ্ধ হয়ে ভার্গবগণকে বধ করলেন। ভার্গবনারীগণ ভয়ে হিমালয়ে আশ্রয়