পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব
৭৯

 অর্জুন বললেন, গন্ধর্ব, তোমার সবই জানা আছে, এখন আমাদের উপযুক্ত পুরোহিত কে আছেন তা বল। গন্ধর্বরাজ বললেন, দেবলের কনিষ্ঠ ভ্রাতা ধৌম্য উৎকোচক তীর্থে তপস্যা করছেন, তাঁকেই পৌরোহিত্যে বরণ করতে পার। অর্জুন প্রীতমনে গন্ধর্বরাজকে আগ্নেয় অস্ত্র দান ক’রে বসলেন, অশ্বগুলি এখন তোমার কাছে থাকুক, আমরা প্রয়োজন হ’লেই নেব। তার পর তাঁরা পরস্পরকে সম্মান দেখিয়ে নিজ নিজ অভীষ্ট স্থানে প্রস্থান করলেন। পাণ্ডবগণ ধৌম্যের আশ্রমে গিয়ে তাঁকে পৌরোহিত্যে বরণ করলেন এবং তাঁর সঙ্গে পাঞ্চালীর স্বয়ংবরে যাবার ইচ্ছা করলেন।


॥স্বয়ংবরপর্বাধ্যায়॥

৩২। দ্রৌপদীর স্বয়ংবর—অর্জুনের লক্ষ্যভেদ

 পাণ্ডবগণ তাঁদের মাতাকে নিয়ে ব্রহ্মচারীর বেশে স্বয়ংবর দেখবার জন্য যাত্রা করলেন। পাঞ্চালযাত্রী বহু ব্রাহ্মণের সঙ্গে তাঁদের পথে আলাপ হ’ল। ব্রাহ্মণরা বললেন, তোমরা দেবতুল্য রূপবান, হয়তো দ্রুপদকন্যা কৃষ্ণা তোমাদের একজনকে বরণ করবেন। দ্রুপদের অধিকৃত দক্ষিণ পাঞ্চালে এসে পাণ্ডবরা ভার্গব নামক এক কুম্ভকারের অতিথি হলেন এবং ব্রাহ্মণের ন্যায় ভিক্ষাবৃত্তি দ্বারা জীবিকানির্বাহ করতে লাগলেন।

 দ্রুপদের ইচ্ছা ছিল যে অর্জুনকেই কন্যাদান করবেন। অর্জুনকে যাতে পাওয়া যায় সেই উদ্দেশ্যে তিনি এমন এক ধনু নির্মাণ করালেন যা নোয়ানো দুঃসাধ্য। তা ছাড়া তিনি শূন্যে একটি যন্ত্র স্থাপিত করে তার উপরে লক্ষ্য বস্তুটি রাখলেন। দ্রুপদ ঘোষণা করলেন, যিনি এই ধনুতে গুণ পরাতে পারবেন এবং যন্ত্র অতিক্রম ক’রে শর দ্বারা লক্ষ্য ভেদ করবেন তিনি আমার কন্যাকে পাবেন। এই ঘোষণা শুনে কর্ণের সঙ্গে দুর্যোধনাদি এবং বহু দেশ থেকে রাজা ও ব্রাহ্মণরা স্বয়ংবর-সভায় এলেন। দ্রুপদ তাঁদের সেবার উপযুক্ত ব্যবস্থা করে দিলেন। নগরের পূর্বোত্তর দিকে সমতলভূমিতে বিশাল সভা নির্মিত হ’ল, তার চতুর্দিক বাসভবন, প্রাচীর, পরিখা, বার ও তোরণে শোভিত। বিচিত্র চন্দ্রাতপে আবৃত সভাস্থান চন্দনজল ও অগুরুধূপে সুবাসিত করা হ’ল। আগন্তুক রাজারা শিখরের ন্যায় উচ্চ শুভ্র প্রাসাদে পরস্পরের প্রতি ম্পর্ধা ক’রে সুখে বাস করতে লাগলেন।