পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮২
মহাভারত

৩৩। কর্ণ-শল্য ও ভীমার্জুনের যুদ্ধ—কুন্তী-সকাশে দ্রৌপদী

 রাজারা ক্রুদ্ধ হয়ে বলতে লাগলেন, আমাদের তৃণের ন্যায় অগ্রাহ্য ক’রে পাঞ্চালরাজ একটা ব্রাহ্মণকে কন্যাদান করতে চান, আমরা দুরাত্মা দ্রুপদ আর তার পুত্রকে বধ করব। আমাদের আহ্বান ক’রে এনে উত্তম অন্ন খাইয়ে পরিশেষে অপমান করা হয়েছে। স্বয়ংবর ক্ষত্রিয়ের জন্য, তাতে ব্রাহ্মণের অধিকার নেই। যদি এই কন্যা আমাদের কাকেও বরণ না করে তবে তাকে আগুনে ফেলে আমরা চ’লে যাব। লোভের বশে যে আমাদের অপ্রিয় কাজ করেছে সেই ব্রাহ্মণকে আমরা বধ করতে পারি না, দ্রুপদকেই বধ করব।

 রাজারা আক্রমণ করতে উদ্যত হয়েছেন দেখে দ্রুপদ শান্তির কামনায় ব্রাহ্মণদের শরণাপন্ন হলেন। ভীম একটা গাছ উপড়ে নিয়ে অর্জুনের পাশে দাঁড়ালেন, অর্জুনও ধনুর্বাণ নিয়ে প্রস্তুত হয়ে রইলেন। ব্রাহ্মণেরা তাঁদের মৃগচর্ম আর করঙ্ক নেড়ে বললেন, ভয় পেয়ো না, আমরা যুদ্ধ করব। অর্জুন সহাস্যে বললেন, আপনারা দর্শক হয়ে এক পাশে থাকুন, আমি শত শত শরে এই ক্রুদ্ধ রাজাদের নিবৃত্ত করব। অনন্তর রাজারা এবং দুর্যোধনাদি ব্রাহ্মণদের দিকে ধাবিত হলেন, কর্ণ অর্জুনকে এবং শল্য ভীমকে আক্রমণ করলেন। অর্জুনের আশ্চর্য শরক্ষেপণ দেখে কর্ণ বললেন, বিপ্রশ্রেষ্ঠ, তুমি কি মূর্তিমান ধনুর্বেদ, না রাম, না বিষ্ণু? অর্জুন বললেন, আমি একজন ব্রাহ্মণ, গুরুর কাছে অস্ত্রশিক্ষা করেছি। এই ব’লে অজুর্ন কর্ণের ধনু ছেদন করলেন। কর্ণ অন্য ধনু নিলেন, তাও ছিন্ন হ’ল। নিজের সকল অস্ত্র বিফল হওয়ায় কর্ণ ভাবলেন, ব্রহ্মতেজ অজেয়, তখন তিনি বাইরে চ’লে গেলেন। শল্য আর ভীম বহুক্ষণ মুষ্টি আর জানু দিয়ে পরস্পরকে আঘাত করতে লাগলেন, অবশেষে ভীম শল্যকে তুলে ভূমিতে নিক্ষেপ করলেন। ব্রাহ্মণরা হেসে উঠলেন। রাজারা বললেন, এই দুই যোদ্ধা ব্রাহ্মণ বিশেষ প্রশংসার পাত্র, আমাদের যুদ্ধ থেকে বিরত হওয়াই উচিত। এঁদের পরিচয় পেলে পরে আবার সানন্দে যুদ্ধ করব। কৃষ্ণ সকলকে অনুনয় ক’রে বললেন, এঁরা ধর্মানুসারেই দ্রৌপদীকে লাভ করেছেন। তখন রাজারা নিবৃত্ত হয়ে চ’লে গেলেন।

 ভীম ও অর্জুন তাঁদের বাসস্থান কুম্ভকারের কর্মশালায় এসে আনন্দিতমনে কুন্তীকে জানালেন যে, তাঁরা ভিক্ষা এনেছেন। কুটীরের ভিতর থেকেই কুন্তী বললেন, তোমরা সকলে মিলে ভোগ কর। তার পর দ্রৌপদীকে দেখে বললেন, আমি অন্যায় কথা বলে ফেলেছি। তিনি দ্রৌপদীর হাত ধরে যুধিষ্ঠিরের কাছে