পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব
৮৩

গিয়ে বললেন, পুত্র, তোমার দুই ভ্রাতা দ্রুপদ রাজার এই কন্যাকে আমার কাছে এনেছে, আমি প্রমাদবশে বলেছি—সকলে মিলে ভোগ কর। যাতে এঁর পাপ না হয় তার উপায় বল। যুধিষ্ঠির একটু চিন্তা ক’রে বললেন, অর্জুন, তুমি যাজ্ঞসেনীকে[১] জয় করেছ, তুমিই এঁকে যথাবিধি বিবাহ কর। অর্জুন বললেন, মহারাজ, আমাকে অধর্মভাগী করবেন না, আগে আপনার, তার পর ভীমের, তার পর আমার, তার পর নকুল-সহদেবের বিবাহ হবে। দ্রৌপদী সকলকেই দেখছিলেন, পাণ্ডবরাও পরস্পরের দিকে চেয়ে দ্রৌপদীর প্রতি আসক্ত হলেন। যুধিষ্ঠির ভ্রাতাদের মনোভাব বুঝলেন, তিনি ব্যাসের কথা স্মরণ করে এবং দ্রাতাদের মধ্যে পাছে ভেদ হয় সেই ভয়ে বললেন, ইনি আমাদের সকলেরই ভার্যা হবেন।

 এমন সময় কৃষ্ণ ও বলরাম সেখানে এলেন এবং যুধিষ্ঠির ও পিতৃষ্বসা কুন্তীর পাদবন্দনা ক’রে বললেন, আমি কৃষ্ণ, আমি বলরাম। কুশলপ্রশ্নের পর যুধিষ্ঠির বললেন, আমরা এখানে গোপনে বাস করছি, বাসুদেব, তোমরা জানলে কি ক’রে? কৃষ্ণ সহাস্যে বললেন, মহারাজ, অগ্নি গুপ্ত থাকলেও প্রকাশ পায়, পাণ্ডব ভিন্ন অন্য কার এত বিক্রম? ভাগ্যক্রমে আপনারা জতুগৃহ থেকে মুক্তি পেয়েছেন, ধৃতরাষ্ট্রের পাপী পুত্রদের অভীষ্ট সিদ্ধ হয় নি। আপনাদের সমৃদ্ধিলাভ হ’ক, আপনারা গোপনে থাকবেন। এই ব’লে কৃষ্ণ-বলরাম তাঁদের শিবিরে প্রস্থান করলেন।


 ভীমার্জুন যখন দ্রৌপদীকে নিজেদের আবাসে নিয়ে আসছিলেন তখন ধৃষ্টদ্যুম্ন তাঁদের পিছনে ছিলেন। কুম্ভকারের গৃহের চতুর্দিকে নিজের অনুচরদের রেখে ধৃষ্টদ্যুম্ন প্রচ্ছন্ন হয়ে রইলেন। সন্ধ্যাকালে কুন্তী ভিক্ষান্ন পাক ক’রে দ্রৌপদীকে বললেন, ভদ্রে, তুমি আগে দেবতা ব্রাহ্মণ আর আগন্তুকদের অন্ন দাও, তার পর যা থাকবে তার অর্ধ ভাগ ভীমকে দাও। অবশিষ্ট অংশ যুধিষ্ঠিরাদি চার ভ্রাতার, তোমার আর আমার জন্য ভাগ কর। দ্রৌপদী হষ্টচিত্তে কুন্তীর আজ্ঞা পালন করলেন। পাণ্ডবদের ভোজনের পর সহদেব ভূমিতে কুশশয্যা পাতলেন, তার উপরে নিজ নিজ মৃগচর্ম বিছিয়ে পঞ্চ ভ্রাতা শুয়ে পড়লেন। কুন্তী তাঁদের মাথার দিকে এবং দ্রৌপদী পায়ের দিকে শুলেন। কুশশয্যায় এইরূপে পায়ের বালিশের মতন শুয়েও দ্রৌপদীর মনে দুঃখ বা পাণ্ডবদের প্রতি অবজ্ঞার ভাব হ’ল না।


  1. দ্রুপদের এক নাম যজ্ঞসেন।