পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৪
মহাভারত

পাণ্ডবরা শুয়ে শুয়ে অস্ত্র রথ হস্তী প্রভৃতি সেনাবিষয়ক আলোচনা করতে লাগলেন। অন্তরাল থেকে ধৃষ্টদ্যুম্ন সমস্তই শুনলেন এবং ভগিনীকে দেখলেন। তিনি রাত্রিকালেই দ্রুপদকে সকল বৃত্তান্ত জানাবার জন্য সত্বর চ’লে গেলেন।

 বিষণ্ণ দ্রুপদ পুত্রকে জিজ্ঞাসা করলেন, কৃষ্ণা কোথায় গেল? কোনও হীনজাতি তাকে নিয়ে যায় নি তো? আমার মস্তকে কর্দমাক্ত চরণ কে রাখলে? পুষ্পমালা কি শ্মশানে পড়েছে? অর্জুনই কি লক্ষ্যভেদ করেছেন?


॥বৈবাহিকপর্বাধ্যায়॥

৩৪। দ্রুপদ-যুধিষ্ঠিরের বিতর্ক

 ধৃষ্টদ্যুম্ন যা দেখেছিলেন আর শুনেছিলেন সমস্তই দ্রুপদকে জানিয়ে বললেন, সেই পঞ্চবীরের কথাবার্তা শুনে মনে হয় তাঁরা নিশ্চয় ক্ষত্রিয়। আমাদের আশা পূর্ণ হয়েছে, কারণ, শুনেছি পাণ্ডবরা অগ্নিদাহ থেকে মুক্তি পেয়েছেন। দ্রুপদ অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে তাঁর পুরোহিতকে পাণ্ডবদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। পুরোহিত গিয়ে বললেন, রাজা পাণ্ডু দ্রুপদের প্রিয় সখা ছিলেন। দ্রুপদের ইচ্ছা তাঁর কন্যা পাণ্ডুর পত্রবধূ হ’ন, অর্জুন তাঁকে ধর্মানুসারে লাভ করুন।

 যুধিষ্ঠিরের আজ্ঞায় ভীম পাদ্য-অর্ঘ্য দিয়ে পুরোহিতকে সংবর্ধনা করলেন। যুধিষ্ঠির বললেন, পাঞ্চালরাজ তাঁর কন্যার বিবাহ সম্বন্ধে জাতি কুল শীল গোত্র কিছুই নির্দেশ করেন নি। তাঁর পণ অনুসারে এই বীর লক্ষ্যভেদ ক’রে কৃষ্ণাকে জয় করেছেন। অনুতাপের কোনও কারণ নেই, তাঁর ইচ্ছা পূর্ণ হবে। এমন সময় দ্রুপদের একজন দূত এসে বললে, রাজা দ্রুপদ তাঁর কন্যার বিবাহ উপলক্ষ্যে বরপক্ষীয়গণকে ভোজন করাতে চান। অন্ন প্রস্তুত, কাঞ্চনপদ্মচিত্রিত উত্তম অশ্বযুক্ত রথও এনেছি, আপনারা কৃষ্ণাকে নিয়ে শীঘ্র চলুন।

 পুরোহিতকে আগে পাঠিয়ে দিয়ে পাণ্ডবগণ, কুন্তী ও দ্রৌপদী পাঞ্চালরাজভবনে এলেন। বরপক্ষের জাতি পরীক্ষার জন্য দ্রুপদ বিভিন্ন উপহার পৃথক পৃথক সাজিয়ে রেখেছিলেন, যথা—একস্থানে ফল ও মাল্য, অন্যত্র বর্ম চর্ম অস্ত্রাদি, অন্যত্র কৃষির যোগ্য গো রজ্জু বীজ প্রভৃতি, অন্যত্র বিবিধ শিল্পকার্যের অস্ত্র এবং ক্রীড়ার উপকরণ। দ্রৌপদীকে নিয়ে কুন্তী অন্তঃপুরে গেলেন। সিংহবিক্রম বিশালবাহু মৃগচর্মধারী পাণ্ডবগণ জ্যেষ্ঠানুক্রমে পাদপীঠযুক্ত শ্রেষ্ঠ আসনে উপবিষ্ট