পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৬
মহাভারত

৩৫। ব্যাসের বিধান—দ্রৌপদীর বিবাহ

 ব্যাস দ্রুপদকে এই উপাখ্যান বললেন।—পুরাকালে দেবতারা নৈমিষারণ্যে এক যজ্ঞ করেন, যম তার পুরোহিত ছিলেন। যম যজ্ঞে নিযুক্ত থাকায় মনুষ্যগণ মৃত্যুহীন হয়ে বৃদ্ধি পেতে লাগল। দেবতারা উদ্‌বিগ্ন হয়ে ব্রহ্মার কাছে গেলে তিনি আশ্বাস দিলেন, যজ্ঞ শেষ হ’লে যম নিজ কার্যে মন দেবেন, তখন আবার মানুষের মরণ হবে। দেবতারা যজ্ঞস্থানে যাত্রা করলেন। যেতে যেতে তাঁরা গঙ্গার জলে একটি স্বর্ণপদ্ম দেখতে পেলেন। ইন্দ্র সেই পদ্ম নিতে গিয়ে দেখলেন, একটি অনলপ্রভা রমণী গঙ্গার গভীর জলে নেমে কাঁদছেন, তাঁর অশ্রুবিন্দু স্বর্ণ পদ্ম হয়ে জলে পড়ছে। রোদনের কারণ জিজ্ঞাসা করলে রমণী ইন্দ্রকে বললেন, আমার পিছনে পিছনে আসুন। কিছুদূর গিয়ে ইন্দ্র দেখলেন, হিমালয়শিখরে সিদ্ধাসনে ব’সে এক সুদর্শন যুবা এক যুবতীর সঙ্গে পাশা খেলছেন। তাঁরা খেলায় মত্ত হয়ে তাঁকে গ্রাহ্য করছেন না দেখে দেবরাজ ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, এই বিশ্ব আমারই অধীন জেনো, আমিই এর ঈশ্বর। যুবা হাস্য ক’রে ইন্দ্রের দিকে চাইলেন, ইন্দ্র স্থাণুর ন্যায় নিশ্চল হয়ে গেলেন। পাশা খেলা শেষ হলে সেই যুবা ইন্দ্রের সঙ্গিনীকে বললেন, ওকে নিয়ে এস, আমি ওর দর্প দূর করছি। সেই রমণীর স্পর্শমাত্র ইন্দ্র অবশ হয়ে ভূপতিত হলেন। তখন যুবকরূপী মহাদেব বললেন, ইন্দ্র, আর কখনও দর্প প্রকাশ ক’রো না। তুমি তো অসীম বলশালী, ওই পর্বতটি উঠিয়ে গহ্বরের ভিতরে গিয়ে দেখ। ইন্দু গহ্বরে প্রবেশ ক’রে দেখলেন, তাঁর তুল্য তেজম্বী চার জন পুরুষ সেখানে রয়েছেন। ইন্দ্রকে ভয়ে কম্পমান দেখে মহাদেব বললেন, গর্বের ফলে এরা এই গহ্বরে রয়েছে, তুমিও এখানে থাক। তোমর। সকলেই মনুষ্য হয়ে জন্মাবে এবং বহু শত্রু, বধ ক’রে আবার ইন্দ্রলোকে ফিরে আসবে।

 তখন পূর্ববর্তী চার ইন্দ্র বললেন, ধর্ম বায়ু, ইন্দ্র ও অশ্বিদ্বয় আমাদের মানুষীর গর্ভে উৎপাদন করবেন। বর্তমান ইন্দ্র বললেন, আমি নিজ বীর্যে একজন পুরুষ সৃষ্টি ক’রে তাকেই পঞ্চম ইন্দ্ররূপে পাঠাব। মহাদেব তাতে সম্মত হলেন এবং সেই লোকবাঞ্ছিতা শ্রীরূপিণী রমণীকে মনষ্যলোকে তাঁদের ভার্যা হবার জন্য আদেশ দিলেন। এই সময়ে নারায়ণ তাঁর একটি কৃষ্ণ এবং একটি শুক্ল কেশ উৎপাটন করলেন। সেই দুই কেশ যদুকুলে গিয়ে দেবকী ও রোহিণীর গর্ভে প্রবিষ্ট হ’ল। শুক্ল কেশ থেকে বলদেব এবং কৃষ্ণ কেশ থেকে কেশব উৎপন্ন হলেন।