পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব
৮৭

 এই উপাখ্যান শেষ ক’রে ব্যাস দ্রুপদকে বললেন, মহারাজ, সেই পাঁচ ইন্দ্রই পাণ্ডবরূপে জন্মেছেন এবং তাঁদের ভার্যারূপে নির্দিষ্টা সেই লক্ষীরূপিণী রমণীই দ্রৌপদী হয়েছেন। আমি আপনাকে দিব্য চক্ষু দিচ্ছি, পাণ্ডবদের পূর্বমূর্তি দেখুন। দ্রুপদ দেখলেন, তাঁরা অনল ও সূর্যতুল্য প্রভাবান দিব্যরূপধারী, তাঁদের বক্ষ বিশাল, দেহ দীর্ঘ, মস্তকে স্বর্ণকিরীট ও দিব্য মাল্য, দেবতার সর্বলক্ষণ তাঁদের দেহে বর্তমান। দ্রুপদ বিস্মিত ও আনন্দিত হয়ে ব্যাসকে প্রণাম করলেন। তখন ব্যাস এক ঋষিকন্যার কথা[১] বললেন যাঁকে মহাদেব বর দিয়েছিলেন—তোমার পঞ্চপতি হবে। ব্যাস আরও বললেন, মানুষের পক্ষে এরূপ বিবাহ বিহিত নয়, কিন্তু এঁরা দেবতার অবতার, মহাদেবের ইচ্ছায় দ্রৌপদী পঞ্চপাণ্ডবের পত্নী হবেন।

 তার পর যুধিষ্ঠিরাদি স্নান ও মাঙ্গলিক কার্য শেষ ক’রে বেশভূষায় সজ্জিত হয়ে পুরোহিত ধৌম্যের সঙ্গে বিবাহ সভায় এলেন। যথানিয়মে অগ্নিতে আহুতি দেবার পর যুধিষ্ঠির দ্রৌপদীর পাণিগ্রহণ করলেন। পরবর্তী চার দিনে একে একে অন্য ভ্রাতাদেরও বিবাহ সম্পন্ন হ’ল। প্রত্যেক বার পুনর্বিবাহের পূর্বে ব্রহ্মর্ষি ব্যাস দ্রৌপদীকে এই অলৌকিক বাক্য বলতেন—তুমি আবার কুমারী হও।

পতিশ্বশুরতা[২] জ্যেষ্ঠে পতিদেবরতানুজে।
মধ্যমেষু চ পাঞ্চাল্যাস্ত্রিতয়ং ত্রিতয়ং ত্রিষু॥

 —জ্যেষ্ঠ যুধিষ্ঠির পাঞ্চালীর পতি ও ভাশুর হলেন, কনিষ্ঠ সহদেব পতি ও দেবর হলেন, এবং মধ্যবর্তী তিন ভাতা প্রত্যেকে পতি ভাশুর ও দেবর হলেন।

 পাণ্ডবদের সঙ্গে মিলন হওয়ায় দ্রুপদ সর্ববিধ ভয় থেকে মুক্তিলাভ করলেন। কুন্তী তাঁর পুত্রবধূকে আশীর্বাদ করলেন, তুমি পতিদের আদরিণী, পতিব্রতা ও বীরপুত্রপ্রসবিনী হও। গুণবতী, তুমি পৃথিবীর সকল রত্ন লাভ কর, শত বৎসর সুখে জীবিত থাক। পাণ্ডবদের বিবাহের সংবাদ পেয়ে কৃষ্ণ বহু মণিমুক্তা ও স্বর্ণাভরণ, মহার্ঘ বসন, সালংকারা দাসী, অশ্ব গজ প্রভৃতি উপহার পাঠালেন।

  1. ২৯-পরিচ্ছেদে আছে।
  2. এখানে শ্বশুর অর্থে ভ্রাতৃশ্বশুর বা ভাশুর।