পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৮
মহাভারত

॥বিদুরাগমনপর্বাধ্যায়॥

৩৬। হস্তিনাপুরে বিতর্ক

 পাণ্ডবগণ দ্রৌপদীকে লাভ করেছেন এবং দুর্যোধনাদি লজ্জিত ও ভগ্নদর্প হয়ে ফিরে এসেছেন জেনে বিদুর প্রীতমনে ধৃতরাষ্ট্রকে বললেন, মহারাজ, ভাগ্যক্রমে কুরুকুলের শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে। ধৃতরাষ্ট্র ভাবলেন, দুর্যোধনই দ্রৌপদীকে পেয়েছেন। তিনি আনন্দিত হয়ে বললেন, কি সৌভাগ্য! এই ব’লে তিনি দুর্যোধনকে আজ্ঞা দিলেন, দ্রৌপদীর জন্য বহু অলংকার নির্মাণ করাও এবং তাঁকে নিয়ে এস। বিদুর প্রকৃত ঘটনা জানালে ধৃতরাষ্ট্র বললেন, যুধিষ্ঠিরাদি যেমন পাণ্ডুর প্রিয় ছিলেন তেমন আমারও প্রিয়। তাঁরা কুশলে আছেন এবং শক্তিশালী মিত্র লাভ করেছেন এজন্য আমি তুষ্ট হয়েছি। বিদুর বললেন, মহারাজ, এই বুদ্ধিই আপনার চিরকাল থাকুক।

 বিদুর চ’লে গেলে দুর্যোধন ও কর্ণ ধৃতরাষ্ট্রকে বললেন, শত্রুর উন্নতিকে আপনি স্বপক্ষের উন্নতি মনে করছেন। এখন আমাদের চেষ্টা করা উচিত যাতে পাণ্ডবদের শক্তিক্ষয় হয়, যেন তারা আমাদের গ্রাস করতে না পারে। ধৃতরাষ্ট্র বললেন, আমারও সেই ইচ্ছা, কিন্তু বিদুরের কাছে তা প্রকাশ করতে চাই না। তোমরা কি কর্তব্য মনে কর তা বল। দুর্যোধন বললেন, আমরা চতুর ও বিশ্বস্ত ব্রাহ্মণদের দ্বারা পাণ্ডবদের মধ্যে ভেদ জন্মাব, দ্রুপদ রাজাকে বিস্তর অর্থ দিয়ে বলব তিনি যেন যুধিষ্ঠিরকে ত্যাগ করেন অথবা নিজ রাজ্যেই তাঁকে রাখেন। দ্রৌপদীর অনেক পতি, তাঁকে অন্য পুরুষে আসক্ত করাও সুসাধ্য। আমরা চতুর লোক দিয়ে ভীমকে হত্যা করাব, সে মরলে তার ভ্রাতাদের তেজ নষ্ট হবে।

 কর্ণ বললেন, তুমি যেসব উপায় বললে তাতে কিছু হবে না। পূর্বে তুমি গুপ্ত উপায়ে পাণ্ডবদের নিগৃহীত করবার চেষ্টা করেছিলে কিন্তু কৃতকার্য হও নি। তারা যখন অসহায় বালক ছিল এবং এখানেই বাস করত তখনই কিছু করতে পার নি। এখন তারা শক্তিমান হয়েছে, বিদেশে রয়েছে, কৌশলপ্রয়োগে তাদের নির্যাতিত করা অসম্ভব। তাদের মধ্যে ভেদ ঘটানোও অসাধ্য, যারা এক পত্নীতে আসক্ত তাদের ভিন্ন করা যায় না। দ্রপদের বহু ধন আছে, ধনের লোভ দেখালে তিনি পাণ্ডবদের ত্যাগ করবেন না। আমার মত এই—পাঞ্চালরাজ যত দিন দুর্বল আছেন, পাণ্ডবরা যত দিন প্রচুর অশ্বরথাদি এবং মিত্র সংগ্রহ করতে না পারে,