পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯০
মহাভারত

দ্রুপদ যাঁদের শ্বশুর এবং ধৃষ্টদ্যুম্নাদি শ্যালক, তাঁরা যুদ্ধে কি না জয় করতে পারেন? আপনি দুর্যোধন কর্ণ আর শকুনির মতে চলবেন না, এঁরা অধার্মিক দুর্বুদ্ধি কাণ্ডজ্ঞানহীন।

 ধৃতরাষ্ট্র বললেন, ভীষ্ম দ্রোণ আর বিদুর হিতবাক্যই বলেছেন। যুধিষ্ঠিরাদি যেমন পাণ্ডুর পুত্র তেমন আমারও পুত্র। অতএব বিদুর, তুমি গিয়ে পঞ্চপাণ্ডব কুন্তী আর দ্রৌপদীকে পরম সমাদরে এখানে নিয়ে এস।

 বিদুর নানাবিধ ধনরত্ন উপহার নিয়ে দ্রুপদের কাছে গিয়ে বললেন, মহারাজ, আপনার সঙ্গে সম্বন্ধ হওয়ায় ধৃতরাষ্ট্র অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছেন; তিনি, ভীষ্ম, এবং অন্যান্য কৌরব আপনার কুশল জিজ্ঞাসা করেছেন। আপনার প্রিয়সখা দ্রোণ আপনাকে গাঢ় আলিঙ্গন জানিয়েছেন। এখন পঞ্চপাণ্ডবকে যাবার অনুমতি দিন। কুরুকুলের নারীগণ পাঞ্চালীকে দেখবার জন্য উৎসুক হয়ে আছেন।


॥ রাজ্যলাভপর্বাধ্যায়॥

৩৭। খাণ্ডবপ্রস্থ—সুন্দ-উপসুন্দ ও তিলোত্তমা

 বিদুরের কথা শুনে দ্রুপদ বললেন, আপনার প্রস্তাব অতি সংগত, কিন্তু আমার কিছু বলা উচিত নয়। যদি যুধিষ্ঠিরাদি ইচ্ছা করেন এবং বলরাম ও কৃষ্ণ তাতে মত দেন তবে পাণ্ডবগণ অবশ্যই যাবেন। কৃষ্ণ বললেন, এঁদের যাওয়াই উচিত মনে করি, এখন ধর্মজ্ঞ দ্রুপদ যেমন আজ্ঞা করেন। দ্রুপদ বললেন, পুরুষোত্তম কৃষ্ণ যা কালোচিত মনে করেন আমিও তাই কর্তব্য মনে করি।

 অনন্তর পাণ্ডবগণ দ্রোণ, কৃপ, বিকর্ণ প্রভৃতির সঙ্গে সুসজ্জিত হস্তিনাপুরে মহা আনন্দে প্রবেশ করলেন। দুর্যোধনের মহিষী এবং অন্যান্য বধূগণ লক্ষীরূপিণী দ্রৌপদীকে অতি আদরের সহিত গ্রহণ করলেন। গান্ধারী তাঁকে আলিঙ্গন ক’রেই মনে করলেন, এই পাঞ্চালীর জন্য আমার পুত্রদের মৃত্যু হবে। তাঁর আদেশে বিদুর শুভনক্ষত্রযোগে কুন্তী ও দ্রৌপদীকে পাণ্ডুর ভবনে নিয়ে গেলেন এবং সর্ব বিষয়ে তাঁদের সাহায্য করতে লাগলেন। কিছুকাল পরে ভীষ্মের সমক্ষে ধৃতরাষ্ট্র যুধিষ্ঠিরকে বললেন, তোমরা অর্ধ রাজ্য নাও এবং খাণ্ডবপ্রস্থে বাস কর, তা হলে আমাদের মধ্যে আর বিবাদ হবে না।

 পাণ্ডবগণ সম্মত হলেন। তাঁরা কৃষ্ণকে অগ্রবর্তী ক’রে ঘোর বনপথ দিয়ে খাণ্ডবপ্রস্থে গেলেন এবং সেখানে বহু সৌধসমন্বিত পরিখা-প্রাকার-বেষ্টিত