পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব
৯১

উপবন-সরোবরাদি-শোভিত স্বর্গধামতুল্য এক নগর[১] স্থাপন করলেন। পাণ্ডবদের সেখানে সুপ্রতিষ্ঠিত ক’রে বলরাম ও কৃষ্ণ দ্বারবতী[২] তে ফিরে গেলেন।


 ভ্রাতৃগণ ও দ্রৌপদীর সঙ্গে যুধিষ্ঠির ইন্দ্রপ্রস্থে সুখে বাস করতে লাগলেন। একদিন দেবর্ষি নারদ তাঁদের কাছে এলেন। যুধিষ্ঠির তাঁকে নিজের রমণীয় আসনে বসিয়ে যথাবিধি অর্ঘ্য নিবেদন করলেন। তাঁর আদেশে দ্রৌপদী বসনে দেহ আবৃত ক’রে এলেন এবং নারদকে প্রণাম ক’রে কৃতাঞ্জলি হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। নারদ তাঁকে আশীর্বাদ ক’রে বললেন, এখন যেতে পার। দ্রৌপদী চ’লে গেলে নারদ পাণ্ডবগণকে নিভৃতে বললেন, পাঞ্চালী একাই তোমাদের সকলের ধর্মপত্নী, এমন নিয়ম কর যাতে তোমাদের মধ্যে ভেদ না হয়। তার পর নারদ এই উপাখ্যান বললেন।—

 পুরাকালে মহাসুর হিরণ্যকশিপুর বংশজাত দৈত্যরাজ নিকুম্ভের সুন্দ উপসুন্দ নামে দুই পরাক্রান্ত পুত্র জন্মেছিল। তারা পরস্পরের প্রতি অত্যন্ত অনুরক্ত ছিল এবং একযোগে সকল কার্য করত। বয়ঃপ্রাপ্ত হয়ে ত্রিলোকবিজয়ের কামনায় তারা বিন্ধ্যপর্বতে গিয়ে কঠোর তপস্যা আরম্ভ করলে। দেবতারা ভয় পেয়ে নানাপ্রকার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের তপোভঙ্গ করবার চেষ্টা করলেন, কিন্তু সুন্দ-উপসুন্দ বিচলিত হ’ল না। তার পর ব্রহ্মা বর দিতে এলে তারা বললে, আমরা যেন মায়াবিৎ অস্ত্রবিৎ বলবান কামরূপী এবং অমর হই। ব্রহ্মা বললেন, তোমরা ত্রিলোকবিজয়ের জন্য তপস্যা করছ, সে কারণে অমরত্বের বর দিতে পারি না। তখন তারা বললে, তবে এই বর দিন যে ত্রিলোকের স্থাবরজঙ্গম থেকে আমাদের কোনও ভয় থাকবে না, মৃত্যু যদি হয় তো পরস্পরের হাতেই হবে। ব্রহ্মা তাদের প্রার্থিত বর দিলেন। তারা দৈত্যপুরীতে গিয়ে বন্ধুবর্গের সঙ্গে ভোগবিলাসে মগ্ন হ’ল এবং বহু বৎসর ধ’রে নানাপ্রকার উৎসব করতে লাগল। তার পর তারা বিপুল সৈন্যদল নিয়ে দেবলোক জয় করতে গেল। দেবগণ ব্রহ্মার বরের বিষয় জানতেন, সেজন্য স্বর্গ ত্যাগ ক’রে ব্রহ্মলোকে পালিয়ে গেলেন। সুন্দ-উপসুন্দ ইন্দ্রলোক এবং যক্ষ, রক্ষ, খেচর, পাতালবাসী নাগ, সমুদ্রতীরবাসী ম্লেচ্ছ প্রভৃতি সকলকেই জয় করলে এবং আশ্রমবাসী তপস্বীদের উপরেও অত্যাচার করতে লাগল।

  1. এই নগরকেই পরে ইন্দ্রপ্রস্থ বলা হয়েছে।
  2. দ্বারকা।