পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯২
মহাভারত

 দেবগণ ও মহর্ষিগণের প্রার্থনায় ব্রহ্মা বিশ্বকর্মাকে আদেশ দিলেন, তুমি এমন এক প্রমদা সৃষ্টি কর যাকে সকলেই কামনা করে। বিশ্বকর্মা ত্রিলোকের স্থাবরজঙ্গম থেকে সর্বপ্রকার মনোহর উপাদান আহরণ ক’রে এক অতুলনীয়া রূপবতী নারী সৃষ্টি করলেন। জগতের উত্তম বস্তু তিল তিল পরিমাণে মিলিত ক’রে সৃষ্ট এজন্য ব্রহ্মা তার নাম দিলেন তিলোত্তমা। তিনি আদেশ দিলেন, তুমি সুন্দ-উপসুন্দকে প্রলুব্ধ কর। তিলোত্তমা যাবার পূর্বে দেবগণকে প্রদক্ষিণ করলে। ঘুরতে ঘুরতে তিলোত্তমা যে দিকে যায়, তাকে দেখবার জন্য সেই দিকেই ব্রহ্মার একটি মুখ নির্গত হ’ল, এইরূপে তিনি চতুর্মুখ হলেন। ইন্দ্রেরও সহস্র নয়ন হ’ল। শিব স্থির হয়ে ছিলেন সেজন্য তাঁর নাম স্থাণু।

 সুন্দ-উপসুন্দ বিন্ধ্যপর্বতের নিকট পুষ্পিত শালবনে সুরাপানে মত্ত হয়ে বিহার করছিল এমন সময় মনোহর রক্তবসন প’রে তিলোত্তমা সেখানে গেল। সুন্দ তার ডান হাত এবং উপসন্দ বাঁ হাত ধরলে। ভ্রুকুটি ক’রে সুন্দ বললে, এ আমার ভার্যা, তোমার গুরুস্থানীয়া। উপসুন্দ বললে, এ আমার ভার্যা, তোমার বধূস্থানীয়া। তার পর তারা গদা নিয়ে যুদ্ধ ক’রে দুজনেই নিহত হ’ল। দেবগণ ও মহর্ষিগণের সঙ্গে ব্রহ্মা সেখানে এসে তিলোত্তমাকে বললেন, সুন্দরী, তুমি আদিত্যলোকে বিচরণ করবে, তোমার তেজের জন্য কেউ তোমাকে ভাল ক’রে দেখতে পারবে না।

 উপাখ্যান শেষ ক’রে নারদ বললেন, সর্ববিষয়ে মিলিত ও একমত হয়েও তিলোত্তমার জন্য দুই অসুর পরস্পরকে বধ করেছিল, অতএব তোমরা এমন উপায় কর যাতে দ্রৌপদীর জন্য তোমাদের বিচ্ছেদ না হয়। তখন পাণ্ডবগণ এই নিয়ম করলেন যে দ্রৌপদী এক একজনের গৃহে এক এক বৎসর বাস করবেন, সেই সময়ে অন্য কোনও ভ্রাতা যদি তাঁদের দেখেন তবে তাঁকে ব্রহ্মচারী হয়ে বার বৎসর বনবাসে যেতে হবে।


॥অর্জুনবনবাসপর্বাধ্যায়॥

৩৮। অর্জুনের বনরাস—উলূপী, চিত্রাঙ্গদা ও বর্গা—বভ্রুবাহন

 একদিন কয়েক জন ব্রাহ্মণ ইন্দ্রপ্রস্থে এসে ক্রুদ্ধকণ্ঠে বললেন, নীচাশয় নৃশংস লোকে আমাদের গোধন হরণ করছে। যে রাজা শস্যাদির ষষ্ঠ ভাগ কর নেন অথচ প্রজাদের রক্ষা করেন না তাঁকে লোকে পাপাচারী বলে। ব্রাহ্মণের ধন