পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব
৯৩

চোরে নিয়ে যাচ্ছে, তার প্রতিকার কর। অর্জুন ব্রাহ্মণদের আশ্বাস দিয়ে অস্ত্র আনতে গেলেন, কিন্তু যে গৃহে অস্ত্র ছিল সেই গৃহেই তখন দ্রৌপদীর সঙ্গে যুধিষ্ঠির বাস করছিলেন। অর্জুন সমস্যায় প’ড়ে ভাবলেন, যদি ব্রাহ্মণের ধনরক্ষা না করি তবে রাজা যুধিষ্ঠিরের মহা অধর্ম হবে, আর যদি নিয়মভঙ্গ ক’রে তাঁর ঘরে যাই তবে আমাকে বনবাসে যেতে হবে। যাই হ’ক আমি ধর্ম পালন করব। অর্জুন যুধিষ্ঠিরের ঘরে গেলেন এবং তাঁর সম্মতিক্রমে ধনুর্বাণ নিয়ে ব্রাহ্মণদের কাছে এসে বললেন, শীঘ্র চলুন, চোরেরা দূরে যাবার আগেই তাদের ধরতে হবে।

 অর্জুন রথারোহণে যাত্রা ক’রে চোরদের শাস্তি দিয়ে গোধন উদ্ধার ক’রে ব্রাহ্মণদের দিলেন এবং ফিরে এসে ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরকে বললেন, মহারাজ, আমি নিয়ম লঙ্ঘন করেছি, আজ্ঞা দিন, প্রায়শ্চিত্তের জন্য বনে যাব। যুধিষ্ঠির কাতর হয়ে বললেন, তুমি আমার ঘরে এসেছিলে সেজন্য আমি অসন্তুষ্ট হই নি, জ্যেষ্ঠের ঘরে কনিষ্ঠ এলে দোষ হয় না, তার বিপরীত হ’লেই দোষ হয়। অর্জুন বললেন, আপনার মুখেই শুনেছি —ধর্মাচরণে ছল করবে না। আমি আয়ুধ স্পর্শ ক’রে বলছি, সত্য থেকে বিচলিত হব না। তার পর যুধিষ্ঠিরের আজ্ঞা নিয়ে অর্জুন বার বৎসরের জন্য বনে গেলেন, অনেক বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ ভিক্ষু পুরাণপাঠক প্রভৃতিও তাঁর অনুগমন করলেন।

 বহু দেশ ভ্রমণ ক’রে অর্জুন গঙ্গাদ্বারে এসে সেখানে বাস করতে লাগলেন। একদিন তিনি স্নানের জন্য গঙ্গায় নামলে নাগরাজকন্যা উলূপী তাঁকে টেনে নিয়ে গেলেন। অর্জুনের প্রশ্নের উত্তরে উলূপী বললেন, আমি ঐরাবতকুলজাত কৌরব্য নামক নাগের কন্যা, আপনি আমাকে ভজনা করুন। আপনার ব্রহ্মচর্যের যে নিয়ম আছে তা কেবল দ্রৌপদীর সম্বন্ধে। আমার অনুরোধ রাখলে আপনার ধর্ম নষ্ট হবে না, কিন্তু আমার প্রাণরক্ষা হবে। অর্জুন উলূপীর প্রার্থনা পূরণ করলেন। উলূপী তাঁকে বর দিলেন, আপনি জলে অজেয় হবেন, সকল জলচর আপনার বশ হবে।[১]

 উলূপীর কাছে বিদায় নিয়ে অর্জুন নানা তীর্থ পর্যটন করলেন, তার পর মহেন্দ্র পর্বত দেখে সমুদ্রতীর দিয়ে মণিপুরে এলেন। সেখানকার রাজা চিত্রবাহনের সুন্দরী কন্যা চিত্রাঙ্গদাকে দেখে অর্জুন তাঁর পাণিপ্রার্থী হলেন। রাজা অর্জুনের পরিচয় নিয়ে বললেন, আমাদের বংশে প্রভঞ্জন নামে এক রাজা

  1. ভীষ্মপর্ব ১৪-পরিচ্ছেদে ইরাবান সম্বন্ধে পাদটীকা দ্রষ্টব্য।