পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৪
মহাভারত

ছিলেন। তিনি পুত্রের জন্য তপস্যা করলে মহাদেব তাঁকে বর দিলেন, তোমার বংশে প্রতি পুরুষের একটিমাত্র সন্তান হবে। আমার পূর্বপুরুষদের পুত্রই হয়েছিল, কিন্তু আমার কন্যা হয়েছে, তাকেই আমি পুত্র গণ্য করি। তার গর্ভজাত পুত্র আমার বংশধর হবে—এই প্রতিজ্ঞা যদি কর তবে আমার কন্যাকে বিবাহ করতে পার। অর্জুন সেইরূপ প্রতিজ্ঞা ক’রে চিত্রাঙ্গদাকে বিবাহ করলেন এবং মণিপুরে তিন বৎসর বাস করলেন। তার পর পুত্র হ’লে চিত্রাঙ্গদাকে আলিঙ্গন ক’রে পুনর্বার ভ্রমণ করতে গেলেন।

 অর্জুন দেখলেন, অগস্ত্য সৌভদ্র পৌলম কারন্ধম ও ভারদ্বাজ এই পঞ্চতীর্থ তপস্বিগণ বর্জন করেছেন। কারণ জিজ্ঞাসা করে তিনি জানলেন যে এইসকল তীর্থে পাঁচটি কুম্ভীর আছে, তারা মানুষকে টেনে নেয়। তপস্বীদের বারণ না শুনে অর্জুন সৌভদ্র তীর্থে স্নান করতে নামলেন। এক বৃহৎ জলজতু তাঁর পা ধরলে। অর্জুন তাকে সবলে উপরে তুলে আনলে সেই প্রাণী সালংকারা সুন্দরী নারী হয়ে গেল। সে বললে, আমি অপ্সরা বর্গা, কুবেরের প্রিয়া। আমি চার সখীর সঙ্গে ইন্দ্রলোকে গিয়েছিলাম, ফেরবার সময় আমরা দেখলাম এক রূপবান ব্রাহ্মণ নির্জন স্থানে বেদাধ্যয়ন করছেন। আমরা তাঁকে প্রলুব্ধ করতে চেষ্টা করলে তিনি শাপ দিলেন, তোমরা কুম্ভীর হয়ে শতবর্ষ জলে বাস করবে। আমরা অনুনয় করলে তিনি বললেন, কোনও পুরুষশ্রেষ্ঠ যদি তোমাদের জল থেকে তোলেন তবে নিজ রূপ ফিরে পাবে। পরে নারদ আমাদের দুঃখের কথা শুনে বললেন, তোমরা দক্ষিণ সাগরের তীরে পঞ্চতীর্থে যাও, অর্জুন তোমাদের উদ্ধার করবেন। সেই অবধি আমরা এখানে আছি। আমাকে যেমন মুক্ত করেছেন সেইরূপ আমার সখীদেরও করুন। অর্জুন অন্য চার অপ্সরাকে শাপমুক্ত করলেন।

 সেখান থেকে অর্জুন পুনর্বার মণিপুরে গেলেন এবং রাজা চিত্রবাহনকে বললেন, আমার পুত্র বজ্রবাহনকে আপনি নিন। তিনি চিত্রাঙ্গদাকে বললেন, তুমি এখানে থেকে পুত্রকে পালন কর, পরে ইন্দ্রপ্রস্থে গিয়ে আমার মাতা ভ্রাতা প্রভৃতির সঙ্গে মিলিত হয়ে আনন্দলাভ করবে। যুধিষ্ঠির যখন রাজসূয় যজ্ঞ করবেন তখন তোমার পিতার সঙ্গে যেয়ো। সুন্দরী, আমার বিরহে দুঃখ ক’রো না।

 তার পর অর্জুন পশ্চিম সমুদ্রের তীরবর্তী সকল তীর্থ দেখে প্রভাসে এলেন। সেই সংবাদ পেয়ে কৃষ্ণ সেখানে এসে অর্জুনকে রৈবতক পর্বতে নিয়ে গেলেন। কৃষ্ণের আদেশে সেই স্থান পূর্বেই সুসজ্জিত করা হয়েছিল এবং সেখানে বিবিধ খাদ্য ও নৃত্যগীতাদির আয়োজন ছিল। অর্জুন সেখানে সুখে