পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব
৯৫

বিশ্রাম ক’রে স্বর্ণময় রথে কৃষ্ণের সঙ্গে দ্বারকায় যাত্রা করলেন। শত সহস্র দ্বারকাবাসী স্ত্রী পুরুষ তাঁকে দেখবার জন্য রাজপথে এল। ভোজ, বৃষ্ণি ও অন্ধক[১] বংশীয় কুমারগণ মহা সমাদরে তাঁর সংবর্ধনা করলেন।


॥সুভদ্রাহরণপর্বাধ্যায়॥

৩৯। রৈবতক—সুভদ্রাহরণ—অভিমন্যু—দ্রৌপদীর পঞ্চপুত্র

 কিছুদিন পরে রৈবতক পর্বতে বৃষ্ণি ও অন্ধক বংশীয়দের মহোৎসব আরম্ভ হ’ল। বহু সহস্র নগরবাসী পত্নী ও অনুচরদের সঙ্গে পদব্রজে ও বিবিধ যানে সেখানে এল। হলধর মত্ত হয়ে তাঁর পত্নী রেবতীর সঙ্গে বিচরণ করতে লাগলেন। প্রদ্যুম্ন, শাম্ব, অক্রুর, সারণ, সাত্যকি প্রভৃতিও স্ত্রীদের নিয়ে এলেন। বাসুদেবের সঙ্গে অর্জুন নানাপ্রকার বিচিত্র কৌতুক দেখে বেড়াতে লাগলেন।

 একদিন অর্জুন বসুদেবকন্যা সালংকারা সুদর্শনা সুভদ্রাকে দেখে মুগ্ধ হলেন। কৃষ্ণ তা লক্ষ্য ক’রে সহাস্যে বললেন, বনবাসীর মন কামে আলোড়িত হ’ল কেন? ইনি আমার ভগিনী সুভদ্রা, সারণের সহোদরা, আমার পিতার প্রিয়কন্যা। যদি চাও তো আমি নিজেই পিতাকে বলব। অর্জুন বললেন, তোমার এই ভগিনী যদি আমার ভার্যা হন তবে আমি কৃতার্থ হব; কিন্তু এঁকে পাবার উপায় কি? কৃষ্ণ বললেন, ক্ষত্রিয়ের পক্ষে স্বয়ংবর বিহিত, কিন্তু স্ত্রীস্বভাব অনিশ্চিত, কাকে বরণ করবে কে জানে। তুমি আমার ভগিনীকে সবলে হরণ কর, ধর্মজ্ঞগণ বলেন এরূপ বিবাহ বীরগণের পক্ষে প্রশস্ত। তার পর কৃষ্ণ ও অর্জুন দ্রুতগামী দূত পাঠিয়ে যুধিষ্ঠিরের সম্মতি আনালেন।

 অর্জন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে কাঞ্চনময় রথে মৃগয়াচ্ছলে যাত্রা করলেন। সুভদ্রা পূজা শেষ ক’রে রৈবতক পর্বত প্রদক্ষিণ ক’রে দ্বারকায় ফিরছিলেন, অর্জুন তাঁকে সবলে রথে তুলে নিয়ে ইন্দ্রপ্রস্থের দিকে চললেন। কয়েকজন সৈনিক এই ব্যাপার দেখে কোলাহল করতে করতে সুধর্মা নামক মন্ত্রণাসভায় এসে সভাপালকে জানালে, সভাপাল যুদ্ধসজ্জার জন্য মহাভেরী বাজাতে লাগলেন। সেই শব্দ শুনে যাদবগণ পানভোজন ত্যাগ ক’রে সভায় এসে মন্ত্রণা করলেন এবং অর্জুনের আচরণে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে যুদ্ধের জন্য উদ্‌গ্রীব হলেন।


  1. যদুবংশের বিভিন্ন শাখা।