পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৬
মহাভারত

 সুরাপানে মত্ত বলরাম সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন। তাঁর পরিধানে নীল বসন, কণ্ঠে বনমালা। তিনি বললেন, ওহে নির্বোধগণ, কৃষ্ণের মত না জেনেই তোমরা গর্জন করছ কেন? তিনি কি বলেন আগে শোন তার পর যা হয় ক’রো। তার পর তিনি কৃষ্ণকে বললেন, তুমি নির্বাক হয়ে রয়েছ কেন? তোমার জন্যই আমরা অর্জুনকে সম্মান করেছি, কিন্তু সেই কুলাঙ্গার তার যোগ্য নয়। যার সৎকুলে জন্ম সে অন্নগ্রহণ ক’রে ভোজনপাত্র ভাঙে না। সুভদ্রাকে হরণ ক’রে সে আমাদের মাথায় পা দিয়েছে, এই অন্যায় আমি সইব না, আমি একাই পৃথিবী থেকে কুরুকুল লুপ্ত করব। সভাস্থ সকলেই বলরামের কথার অনুমোদন করলেন। কৃষ্ণ বললেন, অর্জুন যা করেছেন তাতে আমাদের বংশের অপমান হয় নি, বরং মানবৃদ্ধি হয়েছে। আমরা ধনের লোভে কন্যা বিক্রয় করব এমন কথা তিনি ভাবেন নি, স্বয়ংবরেও তিনি সম্মত নন, এই কারণেই তিনি ক্ষত্রধর্ম অনুসারে কন্যা হরণ করেছেন। অর্জুন ভরত-শান্তনুর বংশে কুন্তীর গর্ভে জন্মেছেন, তিনি যুদ্ধে অজেয়, এমন সৎপাত্র কে না চায়? আপনারা শীঘ্র গিয়ে মিষ্টবাক্যে তাঁকে ফিরিয়ে আনউন, এই আমার মত। তিনি যদি আপনাদের পরাজিত ক’রে স্বভবনে চ’লে যান তবে আপনাদের যশ নষ্ট হবে, কিন্তু মিষ্ট কথায় ফিরিয়ে আনলে তা হবে না। আমাদের পিতৃষ্বসার পুত্র হয়ে তিনি শত্রুতা করবেন না।

 যাদবগণ কৃষ্ণের উপদেশ অনুসারে অর্জুনকে ফিরিয়ে আনলেন, তিনি সুভদ্রাকে বিবাহ ক’রে এক বৎসর দ্বারকায় রইলেন, তার পর বনবাসের অবশিষ্ট কাল পুষ্করতীর্থে যাপন করলেন। বার বৎসর পূর্ণ হ’লে অর্জুন ইন্দ্রপ্রস্থে গেলেন। দ্রৌপদী তাঁকে বললেন, কৌন্তেয়, তুমি সুভদ্রার কাছেই যাও, পুনর্বার বন্ধন করলে পূর্বের বন্ধন শিথিল হয়ে যায়। অর্জুন বার বার ক্ষমা চেয়ে দ্রৌপদীকে সান্ত্বনা দিলেন এবং সুভদ্রাকে রক্ত কৌষেয় বসন পরিয়ে গোপবধূর বেশে কুন্তীর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। কুন্তী পরম প্রীতির সহিত তাঁকে আশীর্বাদ করলেন। সুভদ্রা দ্রৌপদীকে প্রণাম ক’রে বললেন, আমি আপনার দাসী। দ্রৌপদী তাঁকে আলিঙ্গন ক’রে বললেন, তোমার স্বামীর যেন শত্রু না থাকে।

 সৈন্যদলে বেষ্টিত হয়ে যদুবীরগণের সঙ্গে কৃষ্ণ-বলরাম নানাবিধ মহার্ঘ যৌতুক নিয়ে ইন্দ্রপ্রস্থে এলেন। অনেক দিন আনন্দে যাপন করে সকলে ফিরে গেলেন, কেবল কৃষ্ণ রইলেন। তিনি যমুনাতীরে অর্জুনের সঙ্গে মৃগয়া ক’রে মৃগ-বরাহ মারতে লাগলেন।

 কিছুকাল পরে সুভদ্রা একটি পুত্র প্রসব করলেন। নির্ভিক ও মন্যুমান