পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব
৯৭

(ক্রোধী বা তেজস্বী) সেজন্য তাঁর নাম অভিমন্যু, হ’ল। জন্মকাল থেকেই কৃষ্ণ এই বালকের সমস্ত শুভকার্য সম্পন্ন করলেন। অর্জুন দেখলেন, অভিমন্যু শৌর্ষে বীর্যে কৃষ্ণেরই তুল্য। দ্রৌপদীও যুধিষ্ঠির ভীমাদির ঔরসে পাঁচটি বীর পুত্র লাভ করলেন, তাঁদের নাম যথাক্রমে প্রতিবিন্ধ্য, সুতসোম, শ্রুতকর্মা, শতানীক ও শ্রুতসেন।


॥খাণ্ডবদাহপর্বাধ্যায়॥

৪০। অগ্নির অগ্নিমান্দ্য—খাণ্ডবদাহ—ময় দানব

 একদিন কৃষ্ণ ও অর্জুন তাঁদের সুহৃদ্‌বর্গ ও নারীগণকে নিয়ে যমুনায় জলবিহার করতে গেলেন। তাঁরা যমনার তীরবর্তী বহু প্রাণিসমাকুল মনোহর খাণ্ডব বন দেখে বিহারস্থানে এলেন এবং সেখানে সকলে পান ভোজন নৃত্য গীত ও বিবিধ ক্রীড়ায় রত হলেন। তার পর কৃষ্ণ ও অর্জুন নিকটস্থ এক মনোরম স্থানে গিয়ে মহার্ঘ আসনে ব’সে নানা বিষয় আলোচনা করতে লাগলেন। এমন সময়ে সেখানে এক ব্রাহ্মণ এলেন, তাঁর দেহ বিশাল, বর্ণ তপ্তকাঞ্চনতুলা, শ্মশ্রু পিঙ্গলবর্ণ, মস্তকে জটা, পরিধানে চীরবাস। তিনি বললেন, আমি বহুভোজী ব্রাহ্মণ; কৃষ্ণার্জুন, তোমরা একবার আমাকে প্রচুর ভোজন করিয়ে তৃপ্ত কর। আমি অগ্নি, অন্ন চাই না, এই খাণ্ডব বন দগ্ধ করতে ইচ্ছা করি। তক্ষক নাগ সপরিবারে এখানে থাকে, তার সখা ইন্দ্র এই বন রক্ষা করেন সেজন্য আমি দগ্ধ করতে পারি না। তোমরা উত্তম অস্ত্রবিৎ, তোমরা সহায় হ’লে আমি খাণ্ডবদাহ করব, এই ভোজনই আমি চাই।

 এই সময়ে বৈশম্পায়ন জনমেজয়কে এই পূর্ব-ইতিবৃত্ত বললেন।—শ্বেতকি নামে এক রাজা নিরন্তর যজ্ঞ করতেন। তাঁর পুরোহিতদের চক্ষু ধূমে পীড়িত হওয়ায় তাঁরা আর যজ্ঞ করতে চাইলেন না। তখন রাজা মহাদেবের তপস্যা করতে লাগলেন। মহাদেব বর দিতে এলে শ্বেতকি বললেন, আপনি আমার যজ্ঞে পৌরোহিত্য করুন। মহাদেব হাস্য ক’রে বললেন, আমি তা পারি না। পরিশেষে মহাদেবের আজ্ঞায় দুর্বাসা শ্বেতকির যজ্ঞ সম্পন্ন করলেন। সেই যজ্ঞে অগ্নিদেব বার বৎসর ঘৃতপান করেছিলেন, তার ফলে তাঁর অরুচি রোগ হল। তিনি প্রতিকারের জন্য ব্রহ্মার কাছে গেলে ব্রহ্মা সহাস্যে বললেন, তুমি খাণ্ডববন দগ্ধ ক’রে