পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৮
মহাভারত

সেখানকার প্রাণীদের মেদ ভক্ষণ কর, তা হ’লেই প্রকৃতিস্থ হবে। অগ্নি খাণ্ডববন দগ্ধ করতে গেলেন, কিন্তু শতসহস্র হস্তী শুণ্ড দ্বারা এবং বহুশীর্ষ নাগগণ মস্তক দ্বারা জলসেচন ক’রে অগ্নি নির্বাপিত করলে। সাত বার চেষ্টা ক’রে বিফল হয়ে অগ্নিদেব আবার ব্রহ্মার কাছে গেলেন। ব্রহ্মা বললেন, নর ও নারায়ণ ঋষি অর্জুন ও কৃষ্ণরূপে জন্মেছেন এবং এখন খাণ্ডববনেই আছেন, তাঁরা তোমার সহায় হ’লে দেবতারাও বাধা দিতে পারবেন না।


 অর্জুন অগ্নিকে বললেন, ভগবান, আমার কাছে দিব্য বাণ অনেক আছে কিন্তু তার উপযুক্ত ধনু এখন সঙ্গে নেই, কৃষ্ণও নিরস্ত্র। আপনি এমন উপায় বলুন যাতে ইন্দ্র বর্ষণ করলে আমি তাঁকে নিবারণ করতে পারি। তখন অগ্নিদেব লোকপাল বরুণকে স্মরণ করলেন এবং বরুণ উপস্থিত হ’লে তাঁর কাছ থেকে চন্দ্রপ্রদত্ত গাণ্ডীব[১] ধনু, দুই অক্ষয় তূণীর, এবং কপিধ্বজ রথ চেয়ে নিয়ে অর্জুনকে দিলেন এবং কৃষ্ণকে একটি চক্র ও কৌমোদকী নামক গদা দিলেন। কৃষ্ণার্জুন দুই রথে আরোহণ করলে অগ্নি খাণ্ডববন দগ্ধ করতে লাগলেন। পশু পক্ষী চিৎকার ক’রে পালাতে গেল, কিন্তু অর্জুনের বাণে বিদ্ধ হয়ে অগ্নিতে পড়ল, কোনও প্রাণী নিস্তার পেলে না। অগ্নির আকাশস্পর্শী শিখা দেখে দেবতারা উদ্‌বিগ্ন হলেন। ইন্দ্রের আদেশে মেঘ থেকে সহস্রধারায় জলবর্ষণ হ’তে লাগল, কিন্তু অগ্নির তেজে তা আকাশেই শুখিয়ে গেল। এই সময়ে নাগরাজ তক্ষক কুরুক্ষেত্রে ছিলেন। তক্ষকপত্নী তাঁর পুত্র অশ্বসেনকে গিলে ফেলে বাইরে আসবার চেষ্টা করলে অর্জুন তাঁর শিরশ্ছেদন করলেন। তখন ইন্দ্র বায়ু বর্ষণ ক’রে অর্জুনকে মোহগ্রস্ত করলেন, সেই সুযোগে অশ্বসেন মক্ত হ’ল। অগ্নি কৃষ্ণ ও অর্জুন তাকে শাপ দিলেন, তুমি নিরাশ্রয় হবে। ইন্দ্র তাঁকে বঞ্চিত করেছেন এই কারণে অর্জুন অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে শরজালে আকাশ আচ্ছন্ন করলেন। ইন্দ্র অর্জুনের তুমল যুদ্ধ হ’তে লাগল। অসুর গন্ধর্ব যক্ষ রাক্ষস কৃষ্ণার্জুনকে হারাবার জন্য উপস্থিত হ’ল, কিন্তু অর্জুনের শরাঘাতে এবং কৃষ্ণের চক্রে আহত হয়ে সকলেই বিতাড়িত হ’ল। ইন্দ্র বজ্র নিয়ে এবং দেবগণ নিজ নিজ অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করলেন, কিন্তু কৃষ্ণার্জুনের অস্ত্রাঘাতে তাঁদের চেষ্টা ব্যর্থ হ’ল।


  1. টীকাকার নীলকণ্ঠ বলেন, গাণ্ডী বা গণ্ডারের পৃষ্ঠবংশ (মেরূদণ্ড) দিয়ে প্রস্তুত সেজন্য গাণ্ডীব নাম।