পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব
৯৯

অবশেষে ইন্দ্র মন্দর পর্বতের একটি বিশাল শৃঙ্গ উৎপাটিত ক’রে অর্জুনের প্রতি নিক্ষেপ করলেন। অর্জুনের বাণে পর্বতশৃঙ্গ সহস্রখণ্ড হয়ে খাণ্ডববনে পড়ল, অসংখ্য প্রাণী নিহত হ’ল।

 দেবগণের পরাজয় দেখে ইন্দ্র আনন্দিত হয়ে কৃষ্ণার্জুনের প্রশংসা করতে লাগলেন। তখন মহাগম্ভীরশব্দে এই অশরীরিণী দৈববাণী হ’ল—বাসব, তোমার সখা তক্ষক দগ্ধ হন নি, তিনি কুরুক্ষেত্রে আছেন। অর্জুন আর বাসুদেবকে কেউ যুদ্ধে জয় করতে পারে না, তাঁরা পূর্বে নর-নারায়ণ নামক দেবতা ছিলেন। দৈববাণী শুনে ইন্দ্রাদি দেবগণ সুরলোকে চলে গেলেন, অগ্নি অবাধে খাণ্ডববন দগ্ধ ক’রে প্রাণিগণের মাংস রুধির বসা খেয়ে পরিতৃপ্ত হলেন। এই সময়ে ময় নামক এক অসুর তক্ষকের আবাস থেকে বেগে পালাচ্ছে দেখে অগ্নি তাকে খেতে চাইলেন। কৃষ্ণ তাকে মারবার জন্য চক্র উদ্যত করলেন, কিন্তু ময়ের কাতর প্রার্থনায় এবং অর্জুনের অনুরোধে নিরস্ত হলেন। অগ্নি পনর দিন ধ’রে খাণ্ডববন দগ্ধ করলেন। তক্ষকপুত্র অশ্বসেন, নমুচির ভ্রাতা ময় দানব এবং চারটি শার্ঙ্গক পক্ষী, এই ছটি প্রাণী ছাড়া কেউ জীবিত রইল না।

 মন্দপাল নামে এক তপস্বীর সন্তান ছিল না। তিনি মৃত্যুর পর পিতৃলোকে স্থান পেলেন না, দেবগণ তাঁকে বললেন, আপনার পিতৃ-ঋণ শোধ হয় নি, আপনি পুত্র উৎপাদন করে তবে এখানে আসুন। শীঘ্র বহু সন্তান লাভের জন্য মন্দপাল শার্ঙ্গক পক্ষী হয়ে জারিতা নাম্নী শার্ঙ্গিকার সঙ্গে সংগত হলেন। জারিতার গর্ভে চারটি ব্রহ্মবাদী পুত্র উৎপন্ন হ’ল। খাণ্ডবদাহের সময় তারা ডিম্বের মধ্যেই ছিল, মন্দপালের প্রার্থনায় অগ্নি তাদের মারলেন না। মন্দপাল তাঁর চার পুত্রকে নিয়ে জারিতার সঙ্গে অন্যত্র চ’লে গেলেন।

 অনন্তর ইন্দ্র দেবগণের সঙ্গে এসে কৃষ্ণার্জুনকে বললেন, তোমাদের আশ্চর্য কর্ম দেখে আমি প্রীত হয়েছি, বর চাও। অর্জুন ইন্দ্রের সমস্ত অস্ত্র চাইলেন। ইন্দ্র বললেন, মহাদেব যখন তোমার উপর প্রসন্ন হবেন তখন তোমাকে সকল অস্ত্র দেব। কৃষ্ণ বর চাইলেন, অর্জুনের সঙ্গে যেন তাঁর চিরস্থায়ী প্রীতি হয়। ইন্দ্র বর দিয়ে সদলে চ’লে গেলেন। অগ্নি কৃষ্ণার্জুনকে বললেন, আমি পরিতৃপ্ত হয়েছি এখন তোমরা যেখানে ইচ্ছা যেতে পার। তখন কৃষ্ণ, অর্জুন ও ময় দানব তিনজনে রমণীয় নদীকূলে গিয়ে উপবেশন করলেন।