পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সভাপর্ব
১০৫

তাঁরা বললেন, আপনি সম্রাট হবার যোগ্য, আপনার সুহৃদ্‌বর্গ মনে করেন যে এখনই রাজসূয় যজ্ঞ করবার প্রকৃষ্ট সময়। পুরোহিত ও মুনিগণও এই প্রস্তাবে সম্মতি দিলেন। সর্বলোকশ্রেষ্ঠ জনার্দন কৃষ্ণের মত জানা কর্তব্য এই ভেবে যুধিষ্ঠির একজন দূতকে দ্রুতগামী রথে দ্বারকায় পাঠালেন, কৃষ্ণও যুধিষ্ঠিরের ইচ্ছা জেনে সত্বর ইন্দ্রপ্রস্থে এলেন।

 কৃষ্ণ বললেন, মহারাজ, রাজসূয় যজ্ঞ করবার সকল গুণই আপনার আছে, তথাপি কিছু বলছি শুনুন। পৃথিবীতে এখন যেসকল রাজা বা ক্ষত্রিয় আছেন তাঁরা সকলেই পুরুরবা বা ইক্ষ্বাকু বংশধর। যযাতি থেকে উৎপন্ন ভোজবংশীয়গণ চতুর্দিকে রাজত্ব করছেন, কিন্তু তাঁদের সকলকে অভিভূত ক’রে জরাসন্ধ এখন শীর্ষস্থান অধিকার করেছেন। সমস্ত পৃথিবী যাঁর বশে থাকে তিনিই সম্রাটের পদ লাভ করেন। প্রতাপশালী শিশুপাল সেই জরাসন্ধের সেনাপতি। করুষ দেশের রাজা মহাবল বক্র, করভ মেঘবাহন প্রভৃতি রাজা, এবং আপনার পিতার সখা মুর ও নরক দেশের অধিপতি বৃদ্ধ যবনরাজ ভগদত্ত, এঁরা সকলেই জরাসন্ধের অনুগত। কেবল আপনার মাতুল পুরুজিৎ―যিনি পশ্চিম ও দক্ষিণ দেশের রাজা―স্নেহবশে আপনার পক্ষে আছেন। যে দুর্মতি নিজেকে পুরুষোত্তম ও বাসুদেব ব’লে প্রচার করে এবং আমার চিহ্ন ধারণ করে, সেই বঙ্গ-পুণ্ড্র-কিরাতের রাজা পৌণ্ড্রকও জরাসন্ধের পক্ষে গেছে। ভোজবংশীয় মহাবল ভীষ্মকের সঙ্গে আমাদের সম্বন্ধ[১] আছে, আমরা সর্বদা তাঁর প্রিয় আচরণ করি, তথাপি তিনি জরাসন্ধের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। বহু দেশের রাজারা জরাসন্ধের ভয়ে নিজ রাজ্য ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। দুর্মতি কংস জরাসন্ধের দুই কন্যা অস্তি ও প্রাপ্তিকে বিবাহ করে শ্বশুরের সহায়তায় নিজ জ্ঞাতিদের উপর পীড়ন করেছিল, সেজন্য বলরাম ও আমি কংসকে বধ করি। তারপর আমরা আত্মীয়দের সঙ্গে মন্ত্রণা করে এই সিদ্ধান্তে এলাম যে তিন শ বৎসর নিরন্তর যুদ্ধ করেও আমরা জরাসন্ধের সেনা সংহার করতে পারব না।

 হংস ও ডিম্ভক নামে দুই মহাবল রাজা জরাসন্ধের সহায় ছিলেন। বহু বার যুদ্ধ করবার পর বলরাম হংসকে বধ করেন, সেই সংবাদ শুনে মনের দুঃখে ডিম্ভকও জলমগ্ন হয়ে প্রাণত্যাগ করেন। জরাসন্ধ তখন তাঁর সৈন্যদল নিয়ে নিজ রাজ্যে ফিরে যান, আমরাও আনন্দিত হয়ে মথুরায় বাস করতে লাগলাম। তার পর কংসের পত্নী অন্তি তাঁর পিতা জরাসন্ধের কাছে গিয়ে বার বার বললেন, আমার


 

  1. ভীষ্মক রুক্মিণীর পিতা, কৃষ্ণের শ্বশুর।