পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১০
মহাভারত

সৎস্বভাব রাজগণকে রুদ্রের নিকট বলি দেবার সঙ্কল্প করেছ। তোমার এই পাপকার্য নিবারণ না করলে আমাদেরও পাপ হবে। আমরা ধর্মচারী, ধর্মরক্ষায় সমর্থ। মনুষ্যবলি আমরা কখনও দেখি নি, তুমি স্বয়ং ক্ষত্রিয় হয়ে কোন্‌ বুদ্ধিতে ক্ষত্রিয়গণকে মহাদেবের নিকট পশুরূপে বলি দিতে চাও? ক্ষত্রিয়দের রক্ষার নিমিত্ত আমরা তোমাকে বধ করতে এসেছি। আমরা ব্রাহ্মণ নই, আমি হৃষিকেশ কৃষ্ণ, এঁরা দুজন পাণ্ডুপত্র। আমরা তোমাকে যুদ্ধে আহ্বান করছি, হয় বন্দী রাজাদের মুক্তি দাও, না হয় যমালয়ে যাও।

 জরাসন্ধ বললেন, কৃষ্ণ, যাকে সবলে জয় করা হয় তাকে নিয়ে যা ইচ্ছা করা যেতে পারে―এই ক্ষত্রিয়ের ধর্ম। দেবতার জন্য যাদের এনেছি ভয় পেয়ে তাদের ছেড়ে দিতে পারি না। তোমরা কিপ্রকার যুদ্ধ চাও? ব্যুহিত সৈন্য নিয়ে, না তোমাদের একজন বা দুজন বা তিনজনই আমার সঙ্গে যুদ্ধ করবে? কৃষ্ণ বললেন, আমাদের তিনজনের মধ্যে কার সঙ্গে তুমি যুদ্ধ করতে চাও? জরাসন্ধ ভীমসেনকে নির্বাচন করলেন।

 পরোহিত গোরোচনা মালা প্রভৃতি মাঙ্গল্য দ্রব্য এবং বেদনা ও মূর্ছা নিবারক ঔষধ নিয়ে রাজার কাছে এলেন। স্বস্ত্যয়নের পর জরাসন্ধ কিরীট খুলে ফেলে দৃঢ়ভাবে কেশবন্ধন ক’রে ভীমের সম্মুখীন হলেন। কৃষ্ণ ভীমের জন্য স্বস্ত্যয়ন করলে ভীমও যুদ্ধার্থে প্রস্তুত হলেন। দুই যোদ্ধা বাহু ও চরণ দ্বারা পরস্পরকে বেষ্টন ও আঘাত করতে লাগলেন এবং ক্রুদ্ধ সিংহের ন্যায় স্তব্ধনয়নে মল্লযুদ্ধে প্রবৃত্ত হলেন। তাঁরা হস্তীর ন্যায় গর্জন ক’রে পরস্পরের কটি স্কন্ধ পার্শ্ব ও অধোদেশে প্রহার করতে লাগলেন। বহু সহস্র ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়াদি স্ত্রীপুরুষ যুদ্ধ দেখবার জন্য সেখানে সমবেত হ’ল।

 কার্তিক মাসের প্রথম দিনে আরম্ভ হয়ে সেই যুদ্ধ অনাহারে অবিশ্রামে দিবারাত্র চলল। চতুর্দশ দিবসে রাত্রিকালে জরাসন্ধ ক্লান্ত হয়ে কিছুক্ষণ নিবৃত্ত হলেন। তখন কৃষ্ণ ভীমকে বললেন, যুদ্ধে ক্লান্ত শত্রুকে পীড়ন করা উচিত নয়, অধিক পীড়ন করলে প্রাণহানি হয়। অতএব তুমি মৃদুভাবে বাহুদ্বারা রাজার সঙ্গে যদ্ধে কর। কৃষ্ণের কথায় ভীম জরাসন্ধের দুর্বলতা বুঝলেন এবং তাঁকে বধ করবার জন্য আরও সচেষ্ট হয়ে বললেন, কৃষ্ণ, এই পাপী তোমার অনেক স্বজন নিহত করেছে, এ অনুগ্রহের যোগ্য নয়। কৃষ্ণ বললেন, ভীম, তোমার পিতা পবনদেবের কাছে যে দৈববল পেয়েছ সেই বল এখন দেখাও।

 তখন ভীম জরাসন্ধকে দুই হাতে তুলে শতবার ঘূর্ণিত ক’রে ভূমিতে ফেলে