পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সভাপর্ব
১১১

নিষ্পিষ্ট ক’রে গর্জন করতে লাগলেন এবং দুই পা ধরে টান দিয়ে তাঁর দেহ দ্বিধা বিভক্ত করলেন। জরাসন্ধের আর্তনাদ ও ভীমের গর্জন শুনে মগধবাসীরা ত্রস্ত হ’ল, স্ত্রীদের গর্ভপাত হল। তার পর জরাসন্ধের মৃতদেহ রাজভবনের দ্বারে ফেলে দিয়ে কৃষ্ণ ভীম ও অর্জুন সেই রাত্রিতেই বন্দী রাজাদের মুক্ত করলেন।

 জরাসন্ধের দিব্যরথে রাজাদের তুলে নিয়ে তাঁরা গিরিব্রজ থেকে নিষ্ক্রান্ত হলেন। এই রথ ইন্দ্র উপরিচর বসুকে দিয়েছিলেন, উপরিচরের কাছ থেকে বৃহদ্রথ এবং তার পর জরাসন্ধ পান। কৃষ্ণ গরুড়কে স্মরণ করলে গরুড় সেই রথের ধ্বজে বসলেন, কৃষ্ণ স্বয়ং সারথি হলেন। কারামুক্ত কৃতজ্ঞ রাজারা সবিনয়ে বললেন দেবকীনন্দন, আমরা প্রণাম করছি, আজ্ঞা করুন আমাদের কি করতে হবে। যে কর্ম মানুষের পক্ষে দুষ্কর তাও আমরা করতে প্রস্তুত। কৃষ্ণ তাঁদেব আশ্বস্ত ক’রে বললেন, যুধিষ্ঠির রাজসূয় যজ্ঞ ক’রে সম্রাট হ’তে ইচ্ছা করেন, আপনারা তাঁকে সাহায্য করবেন। রাজারা সানন্দে সম্মত হলেন।

 এই সময়ে জরাসন্ধের পত্র সহদেব তাঁর পুরোহিত অমাত্য ও স্বজনবর্গের সঙ্গে এসে বাসুদেবকে কৃতাঞ্জলিপটে প্রণাম করলেন। কৃষ্ণ তাঁকে অভয় দিয়ে তাঁর প্রদত্ত মহার্ঘ রত্নসমূহ নিলেন এবং তাঁকে মগধের রাজপদে অভিষিক্ত করলেন। অনন্তর কৃষ্ণ ও ভীমার্জুন ইন্দ্রপ্রস্থে ফিরে এসে যুধিষ্ঠিরকে সমস্ত বৃত্তান্ত জানালেন। যুধিষ্ঠির অত্যন্ত আনন্দিত হলেন এবং রাজাদের যথাযোগ্য সম্মান ক’রে তাঁদের স্বরাজ্যে যেতে আজ্ঞা দিলেন। কৃষ্ণও দ্বারকায় ফিরে গেলেন।


॥দিগ্‌বিজয়পর্বাধ্যায়॥

৬। পাণ্ডবগণের দিগ্‌বিজয়

 অর্জুন যুধিষ্ঠিরকে বললেন, মহারাজ, ধন, অস্ত্র সহায় ভূমি যশ সবই আমরা পেয়েছি, এখন রাজকোষে ধনবৃদ্ধি করা উচিত মনে করি। অতএব আমি সকল রাজার কাছ থেকে কর আদায় করব। যুধিষ্ঠির সম্মতি দিলে অর্জুন ভীম সহদেব ও নকুল বিভিন্ন দিকে দিগ্‌বিজয়ে যাত্রা করলেন। যুধিষ্ঠির সুহৃদ্‌গণের সঙ্গে ইন্দ্রপ্রস্থে রইলেন।

 অর্জুন উত্তর দিকে গিয়ে কুলিন্দ, আনর্ত, শাকলদ্বীপ প্রভৃতি জয় ক’রে প্রাগ্‌জ্যোতিষপুরে গেলেন। সেখানকার রাজা ভগদত্ত তাঁর কিরাত চীন এবং সাগরতীরবাসী অন্যান্য সৈন্য নিয়ে অর্জুনের সঙ্গে ঘোর যুদ্ধ করলেন। আট দিন