পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সভাপর্ব
১১৩

সাহায্য করতেন সেজন্য সহদেবের প্রচুর সৈন্যক্ষয় এবং প্রাণসংশয় হ’ল। মাহিষ্মতীবাসীরা ভগবান অগ্নিকে পারদারিক বলত। একদিন ব্রাহ্মণের বেশে অগ্নি নীল রাজার সুন্দরী কন্যার সহিত বিহার করছিলেন, রাজা তা জানতে পেরে অগ্নিকে শাসন করলেন। অগ্নির কোপে রাজভবন জ্বলে উঠল, তখন রাজা অগ্নিকে প্রসন্ন ক’রে কন্যাদান করলেন। সেই অবধি অগ্নিদেব রাজার সহায় হলেন। অগ্নির বরে মাহিষ্মতীর নারীরা স্বৈরিণী ছিল, তাদের বারণ করা যেত না। সহদেব বহু স্তুতি করলে অগ্নি তুষ্ট হলেন, তখন অগ্নির আদেশে নীল রাজা সহদেবকে কর দিলেন। সহদেব ত্রিপুর, পৌরব, সুরাষ্ট্র প্রভৃতি দেশ জয় ক’রে ভোজকট নগরে গিরে কৃষ্ণের শ্বশুর ভীষ্মক রাজার নিকট কর আদায় করলেন। তার পর তিনি কর্ণপ্রাবরক[১] গণ, কালমুখ নামক নররাক্ষসগণ, একপাদ পুরুষগণ প্রভৃতিকে জয় ক’রে কেবল দূত পাঠিয়ে পাণ্ড্য, দ্রবিড়, উড্র, কেরল, অন্ধ্র, কলিঙ্গ প্রভৃতি দেশ থেকে কর আদায় করলেন। ধর্মাত্মা বিভীষণও বশ্যতা স্বীকার করে বিবিধ রত্ন, চন্দন, অগুরু কাষ্ঠ, দিব্য আভরণ ও মহার্ঘ বস্ত্র উপহার পাঠালেন। এইরূপে বল ও সামনীতির প্রয়োগে সকল রাজাকে করদ ক’রে সহদেব ইন্দ্রপ্রস্থে ফিরে এসে ধর্মরাজকে সমস্ত ধন নিবেদন করলেন।

 নকুল পশ্চিম দিকে গিয়ে শৈরীষক, মহোত্থ, দশার্ণ, ত্রিগর্ত, মালব, পঞ্চনদ প্রদেশ, দ্বারপালপুর প্রভৃতি জয় করলেন। তিনি দূত পাঠালে যাদবগণসহ কৃষ্ণ বশ্যতা স্বীকার করলেন। তার পর নকুল মদ্ররাজপুর শাকলে গিয়ে মাতুল শল্যের নিকট প্রচুর ধনরত্ন আদায় করলেন এবং সাগরতীরবর্তী ম্লেচ্ছ পহ্লব ও বর্বরগণকে জয় ক’রে দশ হাজার উষ্ট্রে ধন বোঝাই করে ইন্দ্রপ্রস্থে ফিরে এলেন।


॥রাজসূয়িকপর্বাধ্যায়॥

৭। রাজসূয় যজ্ঞের আরম্ভ

 রাজা যুধিষ্ঠির ধনাগারে ও শস্যাগারে সঞ্চিত বস্তুর পরিমাণ জেনে রাজসূয় যজ্ঞে উদ্‌যোগী হলেন। সেই সময়ে কৃষ্ণ ইন্দ্রপ্রস্থে আসায় যুধিষ্ঠির তাঁকে সংবর্ধনা ক’রে বললেন, কৃষ্ণ, তোমার প্রসাদেই এই পৃথিবী আমার বশে এসেছে এবং আমি বহু ধনের অধিকারী হয়েছি। এখন আমি তোমার ও ভ্রাতাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে যজ্ঞ করতে ইচ্ছা করি, তুমি অনুমতি দাও; অথবা তুমি নিজেই এই যজ্ঞে দীক্ষিত


  1. যাদের কান চামড়ায় ঢাকা।