পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সভাপর্ব
১১৫

প্রক্ষালনে নিযুক্ত হলেন। যাঁরা যুধিষ্ঠিরের সভায় এসেছিলেন তাঁদের কেউ সহস্র মুদ্রার কম উপঢৌকন আনেন নি। নিমন্ত্রিত রাজারা স্পর্ধা ক’রে ধনদান করতে সাগলেন যাতে তাঁদের প্রদত্ত অর্থেই যজ্ঞের ব্যয়নির্বাহ হয়।


॥অর্ঘ্যাভিহরণপর্বাধ্যায়॥

৮। কৃষ্ণকে অর্ঘ্য প্রদান

 অভিষেকের দিনে অভ্যাগত ব্রাহ্মণ ও রাজাদের সঙ্গে নারদাদি মহর্ষিগণ যজ্ঞশালার অন্তর্গৃহে প্রবেশ করলেন। ঋষিগণ কার্যের অবকাশে গল্প করতে লাগলেন। বিতণ্ডাকারী দ্বিজগণ বলতে লাগলেন, এইরকম হবে, ও রকম নয়। কেউ কেউ শাস্ত্রের যুক্তি দিয়ে লঘু বিষয়কে গুরু এবং গুরু বিষয়কে লঘু প্রতিপাদিত করতে লাগলেন। আকাশে শ্যেনপক্ষীরা যেমন মাংসখণ্ড নিয়ে ছেঁড়াছিঁড়ি করে সেইরূপ কোনও কোনও বুদ্ধিমান অপরের উক্তির নানাপ্রকার অর্থ করতে লাগলেন। কয়েকজন সর্ববেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ ধর্ম ও অর্থ বিষয়ক আলাপে সানন্দে নিরত হলেন।

 যুধিষ্ঠিরের যজ্ঞে সর্বদেশের ক্ষত্রিয়রাজগণ সমবেত হয়েছেন দেখে নারদ এইপ্রকার চিন্তা করলেন।—সাক্ষাৎ নারায়ণ প্রতিজ্ঞা পালনের জন্য ক্ষত্রকুলে জন্মেছেন। তিনি পূর্বে দেবগণকে আদেশ দিয়েছিলেন—তোমরা পরস্পরকে বধ ক’রে পুনর্বার স্বর্গালোকে আসবে। ইন্দ্রাদি দেবতা যাঁর বাহুবল আশ্রয় করেন তিনিই পৃথিবীতে অন্ধক-বৃষ্ণিদের বংশ উজ্জ্বল করেছেন। অহো, এই মহাবিস্তৃত বলশালী ক্ষত্রগণকে নারায়ণ নিজেই সংহার করবেন!

 ভীষ্ম যুধিষ্ঠিরকে বললেন, এখন রাজগণকে যথাযোগ্য অর্ঘ্য দেবার ব্যবস্থা কর। গুরু পরোহিত, সম্বন্ধী, স্নাতক, সুহৃৎ ও রাজা এই ছ জন অর্ঘ্যদানের যোগ্য। এঁরা বহুদিন পরে আমাদের কাছে এসেছেন। তুমি এঁদের প্রত্যেককেই অর্ঘ্য দিতে পার অথবা যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ তাঁকে দিতে পার। যুধিষ্ঠির বললেন, পিতামহ, আপনি এঁদের মধ্যে একজনের নাম করুন যিনি অর্ঘ্যদানের যোগ্য। ভীষ্ম বললেন, জ্যোতিষ্কগণের মধ্যে যেমন ভাস্কর, সেইরূপ সমাগত সকল জনের মধ্যে তেজ বল ও পরাক্রমে কৃষ্ণই শ্রেষ্ঠ।—

অসূর্যমিব সূর্যেণ নির্বাতমিব বায়ুনা।
ভাসিতং হ্লাদিতঞ্চৈব কৃষ্ণেনেদং সদো হি নঃ॥