পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৬
মহাভারত

—সূর্য যেমন অন্ধকারময় স্থান উদভাসিত করেন, বায়ু যেমন নির্বাত স্থান আহ্লাদিত করেন, সেইরূপ কৃষ্ণ আমাদের এই সভা আলোকিত ও আহ্লাদিত করেছেন।

 ভীষ্মের অনুমতিক্রমে সহদেব কৃষ্ণকে শ্রেষ্ঠ অর্ঘ্য যথাবিধি নিবেদন করলেন, কৃষ্ণও তা নিলেন। চেদিরাজ শিশুপাল কৃষ্ণের এই পূজা সইতে পারলেন না, তিনি সভামধ্যে ভীষ্ম ও যুধিষ্ঠিরকে ভর্ৎসনা ক’রে কৃষ্ণের নিন্দা ক’রতে লাগলেন।

৯। শিশুপালের কৃষ্ণনিন্দা

 শিশুপাল বললেন, যুধিষ্ঠির, এখানে মহামহিম রাজারা উপস্থিত থাকতে কৃষ্ণ রাজার যোগ্য পূজা পেতে পারেন না। তোমরা বালক, সূক্ষ্ম ধর্মতত্ত্ব জান না, ভীষ্মেরও বুদ্ধিলোপ হয়েছে। ভীষ্ম, তোমার ন্যায় ধর্মহীন লোক নিজের প্রিয়কার্য করতে গিয়ে সাধুজনের অবজ্ঞাভাজন হয়। কৃষ্ণ রাজা নন, তিনি তোমাদের পূজা কেন পাবেন? যদি বয়োবৃদ্ধকে অর্ঘ্য দিতে চাও তবে বসুদেব থাকতে তাঁর পুত্রকে দেবে কেন? যদি কৃষ্ণকে পাণ্ডবদের হিতৈষী আর অনুগত মনে কর তবে দ্রুপদ অর্ঘ্য পাবেন না কেন? যদি কৃষ্ণকে আচার্য মনে কর তবে দ্রোণকে অর্থ দিলে না কেন? যদি কৃষ্ণকে পুরোহিত ভেবে থাক তবে বৃদ্ধ দ্বৈপায়ন থাকতে কৃষ্ণকে পূজা করলে কেন? মহারাজ যুধিষ্ঠির, মৃত্যু যাঁর ইচ্ছাধীন সেই পুরুষশ্রেষ্ঠ ভীষ্ম এখানে রয়েছেন; সর্বশাস্ত্রবিশারদ বীর অশ্বত্থামা, রাজেন্দ্র দুর্যোধন, ভরতকুলের আচার্য কৃপ, তোমার পিতা পাণ্ডুর ন্যায় গুণবান মহাবল ভীষ্মক, মদ্রাধিপ শল্য, এবং জামদগ্ন্যের প্রিয়শিষ্য বহুযুদ্ধজয়ী মহারথ কর্ণও এখানে আছেন— এঁদের কাকেও অর্ঘ্য দেওয়া হ’ল না কেন? কৃষ্ণের অর্চনা করাই যদি তোমাদের উদ্দেশ্য হয় তবে অপমান করবার জন্য রাজাদের কেন ডেকে আনলে? আমরা যে কর দিয়েছি তা যুধিষ্ঠিরের ভয়ে বা অনুনয়ে নয়, লোভেও নয়। তিনি ধর্মকার্য করছেন, সম্রাট হ’তে চান, এই কারণেই দিয়েছি। কিন্তু এখন ইনি আমাদের গ্রাহ্য করছেন না। যে দুরাত্মা অন্যায় উপায়ে জরাসন্ধকে নিহত করেছে সেই ধর্মচ্যুত কৃষ্ণকে অর্ঘ্য দিয়ে যুধিষ্ঠিরের ধর্মাত্মা-খ্যাতি নষ্ট হ’ল। আর মাধব, হীনবুদ্ধি পাণ্ডবরা অর্ঘ্য দিলেও তুমি অযোগ্য হয়ে কেন তা নিলে? কুকুর যেমন নির্জন স্থানে ঘৃত পেয়ে ভোজন করে কৃতার্থ হয়, তুমিও সেইরূপ পূজা পেয়ে গৌরব বোধ করছ। কুরুবংশীয়গণ তোমাকে অর্ঘ্য দিয়ে উপহাস করেছে। নপুংসকের