পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সভাপর্ব
১১৭

যেমন বিবাহ, অন্ধের যেমন রূপদর্শন, রাজা না হয়েও রাজযোগ্য পূজা নেওয়া তোমার পক্ষে সেইরূপ। রাজা যুধিষ্ঠির কেমন, ভীষ্ম কেমন, আর এই বাসুদেবও কেমন তা আমরা আজ দেখলাম। এই কথা ব’লে শিশুপাল স্বপক্ষীয় রাজাদের আসন থেকে উঠিয়ে সদলে সভা থেকে চললেন।

 যুধিষ্ঠির তখনই শিশুপালের পিছনে পিছনে গিয়ে মিষ্টবাক্যে বললেন, চেদিরাজ, তোমার কথা ন্যায়সংগত হয় নি, শান্তনুপুত্র ভীষ্মকে তুমি অবজ্ঞা করতে পার না। এখানে তোমার চেয়ে বৃদ্ধ বহু মহীপাল রয়েছেন, তাঁরা যখন কৃষ্ণের পূজা মেনে নিয়েছেন তখন তোমার আপত্তি করা উচিত নয়। কৃষ্ণকে ভীষ্ম যেমন জানেন তুমি তেমন জান না।

 ভীষ্ম বললেন, যিনি সর্বলোকের মধ্যে প্রবীণতম সেই কৃষ্ণের পূজায় যার সম্মতি নেই সে অনুনয় বা মিষ্টবাক্যের যোগ্য নয়। মহাবাহু কৃষ্ণ কেবল আমাদের অর্চনীয় নন, ইনি ত্রিলোকেরই অর্চনীয়। বহু ক্ষত্রিয়কে কৃষ্ণ যুদ্ধে জয় করেছেন, নিখিল জগৎ তাঁতে প্রতিষ্ঠিত, সেজন্য বৃদ্ধ রাজারা এখানে থাকলেও আমি কৃষ্ণকেই পূজনীয় মনে করি। জন্মাবধি ইনি যা করেছেন তা আমি বহুলোকের কাছে বহুবার শুনেছি। এই সভায় উপস্থিত বালক বৃদ্ধ সকলকে পরীক্ষার পর কৃষ্ণের যশ শৌর্য ও জয় জেনেই আমরা তাঁকে অর্ঘ্য দিয়েছি। ব্রাহ্মণদের মধ্যে যিনি জ্ঞানবৃদ্ধ, ক্ষত্রিয়দের মধ্যে যিনি সর্বাধিক বলশালী, বৈশ্যদের মধ্যে যিনি সর্বাধিক ধনী, এবং শূদ্রদের মধ্যে যিনি বয়োবৃদ্ধ, তিনিই বৃদ্ধ রূপে গণ্য হন। দুই কারণে গোবিন্দ সকলের পূজ্য—বেদ বেদাঙ্গের জ্ঞান এবং অমিত বিক্রম। নরলোকে কেশব অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ কে আছে? দান দক্ষতা বেদজ্ঞান শৌর্য শালীনতা কীর্তি, উত্তম বুদ্ধি, বিনয় শ্রী ধৈর্য বৃদ্ধি তুষ্টি, সমস্তই কৃষ্ণে নিত্য বিদ্যমান। ইনি ঋত্বিক গুরু সম্বন্ধী স্নাতক নৃপতি সুহৃৎ—সবই, সেজন্য আমরা এঁর পূজা করেছি। কৃষ্ণই সর্বলোকের উৎপত্তি ও বিনাশের কারণ, ইনি সর্বদা সর্বত্র বিদ্যমান, এই অর্বাচীন শিশুপাল তা বোঝে না তাই অমন কথা বলেছে। সে যদি মনে করে যে কৃষ্ণের পূজা অন্যায়, তবে যা ইচ্ছা করুক।

 সহদেব বললেন, যিনি কেশীকে নিহত করেছেন, যাঁর পরাক্রম অপ্রমেয়, সেই কেশবকে আমি পূজা করছি। ওহে নৃপগণ, আপনাদের মধ্যে যে তা সইতে পারবে না তার মাথায় আমি পা রাখছি। সে আমার কথার উত্তর দিক, তাকে আমি নিশ্চয় বধ করব। রাজাদের মধ্যে যাঁরা বুদ্ধিমান আছেন তাঁরা মানুন যে কৃষ্ণই