পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৮
মহাভারত

অর্থদানের যোগ্য। সহদেব তাঁর পা তুলে দেখালেও সদ্‌বুদ্ধি মানী বলশালী রাজারা কিছু বললেন না। সহদেবের মাথায় পুষ্পবৃষ্টি হ’ল, ‘সাধু সাধু’ ‘এই দৈববাণী শোনা গেল। ভূতভবিষ্যদ্‌দ্বক্তা সর্বলোকজ্ঞ নারদ বললেন, কমলপত্রাক্ষ কৃষ্ণকে যারা অর্চনা করে না তারা জীবন্মৃত, তাদের সঙ্গে কখনও কথা বলা উচিত নয়।

 তার পর সহদেব পূজার্হ সকলকে পূজা ক’রে অর্ঘ্যদান কার্য শেষ করলেন। কৃষ্ণের পূজা হয়ে গেলে শিশু পাল ক্রোধে রক্তলোচন হয়ে রাজাদের বললেন, আমি আপনাদের সেনাপতি, আদেশ দিন, আমি বৃষ্ণি আর পাণ্ডবদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত। শিশুপাল-প্রমুখ সকল রাজাই ক্রোধে আরক্তবদন হয়ে বলতে লাগলেন, যুধিষ্ঠিরের অভিষেক আর বাসুদেবের পূজা যাতে পণ্ড হয় তাই আমাদের করতে হবে। তাঁরা নিজেদের অপমানিত মনে করে ক্রোধে জ্ঞানশূন্য হলেন। সুহৃদ্‌গণ বারণ করলে তাঁরা গর্জন ক’রে উঠলেন, মাংসের কাছ থেকে সরিয়ে নিলে সিংহ যেমন করে। কৃষ্ণ বুঝলেন যে এই বিশাল নৃপতিসংঘ যুদ্ধের জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েছে।


॥শিশুপালবধপর্বাধ্যায়॥

১০। যজ্ঞসভায় বাগ্‌যুদ্ধ

 যুধিষ্ঠির ভীষ্মকে বললেন, পিতামহ, এই বিশাল রাজসমুদ্র ক্রোধে বিচলিত হয়েছে, যাতে যজ্ঞের বিঘ্ন না হয় এবং আমাদের মঙ্গল হয় তা বলুন। ভীষ্ম বললেন, ভয় পেয়ো না, কুকুরের দল যেমন প্রসুপ্ত সিংহের নিকটে এসে ডাকে, এই রাজারাও তেমনি কৃষ্ণের নিকট চিৎকার করছে। অল্পবুদ্ধি শিশুপাল সকল রাজাকেই যমালয়ে পাঠাতে উদ্যত হয়েছে। নরব্যাঘ্র কৃষ্ণ যাকে গ্রহণ করতে ইচ্ছা করেন তার এইপ্রকার বুদ্ধিভ্রংশ ঘটে।

 শিশুপাল বললেন, কুলাঙ্গার ভীষ্ম, তুমি বৃদ্ধ হয়ে রাজাদের বিভীষিকা দেখাচ্ছ, তোমার লজ্জা নেই? বদ্ধ নৌকা যেমন অন্য নৌকার অনুসরণ করে, এক অন্ধ যেমন অন্য অন্ধের পিছনে যায়, কৌরবগণও সেইরূপ তোমার অনুসরণ করছে। তুমি জ্ঞানবৃদ্ধ হয়ে একজন গোপের স্তব করতে চাও! বাল্যকালে কৃষ্ণ পুতনাকে বধ করেছিল, যুদ্ধে অক্ষম অশ্বাসুর আর বৃষভাসুরকে মেরেছিল,