পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২০
মহাভারত

এবং জন্মকালে গর্দভের ন্যায় চিৎকার করেছিল। এর মাতা পিতা প্রভৃতি ভয় পেয়ে একে ত্যাগ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তখন দৈববাণী হ’ল—রাজা, তোমার পুত্রটিকে পালন কর, এর মৃত্যুকাল এখনও আসে নি, যদিও এর হন্তা জন্মগ্রহণ করেছেন। শিশুপালের জননী নমস্কার ক’রে বললেন, আপনি দেবতা বা অন্য যাই হ’ন, বলুন কার হাতে এর মৃত্যু হবে। পুনর্বার দৈববাণী হ’ল—যিনি কোলে নিলে এর অতিরিক্ত দুই হাত খ’সে যাবে এবং যাঁকে দেখে এর তৃতীয় নয়ন লুপ্ত হবে তিনিই এর মৃত্যুর কারণ হবেন। চেদিরাজের অনুরোধে বহু সহস্র রাজা শিশুকে কোলে নিলেন, কিন্তু কোনও পরিবর্তন দেখা গেল না। কিছুকাল পরে বলরাম ও কৃষ্ণ তাঁদের পিতৃষ্বসা (চেদিরাজ দমঘোষের মহিষী) কে দেখতে এলেন। রাজমহিষী কুশলপ্রশ্নাদি করে শিশুটিকে কৃষ্ণের কোলে দিলেন, তৎক্ষণাৎ তার অতিরিক্ত দুই বাহু খ’সে গেল, তৃতীয় চক্ষু ললাটে নিমজ্জিত হ’ল। মহিষী বললেন, কৃষ্ণ, আমি ভয়ার্ত হয়েছি, তুমি বর দাও যে শিশুপালের অপরাধ ক্ষমা করবে। কৃষ্ণ উত্তর দিলেন, দেবী, ভয় নেই, আমি এর একশত অপরাধ ক্ষমা করব। ভীম, এই মন্দমতি শিশুপাল গোবিন্দের বরে দর্পিত হয়েই তোমাকে যুদ্ধে আহ্বান করছে। এই বুদ্ধি এর নিজের নয়, জগৎস্বামী কৃষ্ণের প্রেরণাতেই এমন করছে।

 শিশুপাল বললেন, ভীষ্ম, যদি স্তব ক’রেই আনন্দ পাও তবে বাহ্ণীকরাজ, মহাবীর কর্ণ, অশ্বত্থামা দ্রোণ জয়দ্রথ কৃপ ভীষ্মক শল্য প্রভৃতির স্তব কর না কেন? হিমালয়ের পরপারে কুলিঙ্গ পক্ষিণী থাকে, সে সতত এই শব্দ করে—‘মা সাহসম্’, সাহস ক’রো না, অথচ সে নিজে সিংহের দাঁতের ফাঁক থেকে মাংস খায়, সে জানে না যে সিংহের ইচ্ছাতেই সে বেঁচে আছে। তুমিও সেইরূপ এই ভূপতিদের ইচ্ছায় বেঁচে আছ।

 ভীষ্ম বললেন, চেদিরাজ, যাদের ইচ্ছায় আমি বেঁচে আছি সেই রাজাদের আমি তৃণতুল্যও জ্ঞান করি না। ভীষ্মের কথায় কেউ হাসলেন, কেউ গালি দিলেন, কেউ বললেন, একে পুড়িয়ে মার। ভীষ্ম বললেন, উক্তি আর প্রত্যুক্তিতে বিবাদের শেষ হবে না। আমি তোমাদের মাথায় এই পা রাখছি। যে গোবিন্দকে আমরা পূজা করেছি তিনি এখানেই রয়েছেন, মরবার জন্য যে ব্যস্ত হয়েছে সে চক্রগদাধারী কৃষ্ণকে যুদ্ধে আহ্বান করুক।