পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২২
মহাভারত

হয়ে রইলেন। মহর্ষিগণ, মহাত্মা ব্রাহ্মণগণ এবং মহাবল নৃপতিগণ কৃষ্ণের স্তুতি করতে লাগলেন। যুধিষ্ঠির তাঁর ভ্রাতাদের আজ্ঞা দিলেন যেন সত্বর শিশুপালের সৎকার করা হয়। তার পর যুধিষ্ঠির ও সমবেত রাজারা শিশুপালপুত্রকে চেদিরাজ্যে অভিষিক্ত করলেন।

 যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞ সমাপ্ত হ’ল; ভগবান শৌরি (কৃষ্ণ) শার্ঙ্গধনু চক্র ও গদা নিয়ে শেষ পর্যন্ত যজ্ঞ রক্ষা করলেন। যধিষ্ঠির অবভৃথ স্নান (যজ্ঞান্ত স্নান) করলে সমস্ত ক্ষত্রিয় রাজারা তাঁর কাছে গিয়ে বললেন, মহারাজ, ভাগ্যক্রমে আপনি সাম্রাজ্য পেয়েছেন এবং অজমীঢ় বংশের যশোবৃদ্ধি করেছেন। এই যজ্ঞে সুমহৎ ধর্মকার্য করা হয়েছে, আমরাও সর্বপ্রকারে সংস্কৃত হয়েছি। এখন আজ্ঞা করুন আমরা নিজ নিজ রাজ্যে যাব। যুধিষ্ঠিরের আদেশে তাঁর ভ্রাতারা, ধৃষ্টদ্যুম্ন, অভিমন্যু এবং দ্রৌপদীর পুত্রগণ প্রধান প্রধান রাজাদের অনুগমন করলেন। কৃষ্ণ বিদায় চাইলে যুধিষ্ঠির বললেন, গোবিন্দ, তোমার প্রসাদেই আমার যজ্ঞ সম্পন্ন হয়েছে, সমগ্র ক্ষত্রিয়মণ্ডল আমার বশে এসেছে। কি ব’লে তোমাকে বিদায় দেব? তোমার অভাবে আমি স্বস্তি পাব না। তার পর সুভদ্রা ও দ্রৌপদীকে মিষ্টবাক্যে তুষ্ট করে কৃষ্ণ মেঘবর্ণ গরুড়ধ্বজ রথে দ্বারকায় প্রস্থান করলেন।


॥দ্যূতপর্বাধ্যায়॥

১২। দুর্যোধনের দুঃখ—শকুনির মন্ত্রণা

 ইন্দ্রপ্রস্থে বাসকালে শকুনির সঙ্গে দুর্যোধন পাণ্ডবসভার সমস্ত ঐশ্বর্য ক্রমে ক্রমে দেখলেন। স্ফটিকময় এক স্থানে জল আছে মনে ক’রে তিনি পরিধেয় বস্ত্র টেনে তুললেন, পরে ভ্রম বুঝতে পেরে লজ্জায় বিষণ্ণ হলেন। আর এক স্থানে পদ্মশোভিত সরোবর ছিল, স্ফটিকনির্মিত মনে ক’রে দুর্যোধন চলতে গিয়ে তাতে প’ড়ে গেলেন, ভৃত্যরা হেসে তাঁকে অন্য বস্ত্র এনে দিলে। তিনি বস্ত্র পরিবর্তন ক’রে এলে ভীমার্জুন প্রভৃতিও হাসলেন, দুর্যোধন ক্রোধে তাঁদের প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন না। অন্য এক স্থানে তিনি দ্বার আছে মনে করে স্ফটিকময় প্রাচীরের ভিতর দিয়ে যেতে গিয়ে মাথায় আঘাত পেলেন। আর এক স্থানে কপাট আছে ভেবে ঠেলতে গিয়ে সম্মুখে পড়ে গেলেন, এবং অন্যত্র দ্বার খোলা থাকলেও বন্ধ আছে ভেবে ফিরে এলেন। এইরূপ নানা প্রকারে বিড়ম্বিত হয়ে তিনি অপ্রসন্নমনে হস্তিনাপুরে প্রস্থান করলেন।