পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সভাপর্ব
১২৫

ধৃতরাষ্ট্র দুর্যোধনকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, পুত্র, তুমি পৈতৃক রাজ্য পেয়েছ, ভ্রাতাদের জ্যেষ্ঠ ব’লে রাজার পদে প্রতিষ্ঠিত হয়েছ, তবে শোক করছ কেন?

 পাণ্ডবসভায় তিনি কিরূপ বিড়ম্বনা আর উপহাস ভোগ করেছিলেন তা জানিয়ে দুর্যোধন বললেন, মহারাজ, যুধিষ্ঠিরের জন্য বিভিন্ন দেশের রাজারা যে উপহার এনেছিলেন তার বিবরণ শুনুন। কাম্বোজরাজ স্বর্ণখচিত মেষলোমনির্মিত এবং গর্তবাসী প্রাণী ও বিড়ালের লোমনির্মিত আবরণবস্ত্র এবং উত্তম চর্ম দিয়েছেন। ত্রিগর্তরাজ বহুশত অশ্ব, উষ্ট্র ও অশ্বতর দিয়েছেন। শূদ্রেরা কার্পাসিকদেশবাসিনী শতসহস্র তন্বী শ্যামা দীর্ঘকেশী দাসী দিয়েছে। ম্লেচ্ছরাজ ভগদত্ত বহু অশ্ব, লৌহময় অলংকার, এবং হস্তিদন্তের মুষ্টিযুক্ত অসি দিয়েছেন। দ্বিচক্ষু, ত্রিচক্ষু[১], ললাটচক্ষু[১], উষ্ণীষধারী, বস্ত্রহীন, রোমশ, নরখাদক, একপাদ[১], চীন, শক, উড্র, বর্বর, বনবাসী, হারহূণ প্রভৃতি লোকেরা নানা দিক থেকে এসেছিল, তারা বহুক্ষণ দ্বারদেশে অপেক্ষা ক’রে তবে প্রবেশ করতে পেরেছিল। মেরু ও মন্দর পর্বতের মধ্যে শৈলোদা নদীর তীরে যারা থাকে, সেই খস পারদ কুলিঙ্গ প্রভৃতি জাতি রাশি রাশি পিপীলিক[১] স্বর্ণ এনেছিল, পিপীলিকারা যা ভূমি থেকে তোলে। কিরাত দরদ পারদ বাহ্ণীক কেরল অঙ্গ বঙ্গ কলিঙ্গ পুণ্ড্রক এবং আরও বহু দেশের লোক নানাবিধ উপহার দিয়েছে। বাসুদেব কৃষ্ণ অর্জুনের সম্মানার্থে চোদ্দ হাজার উৎকৃষ্ট হস্তী দিয়েছেন। দ্রৌপদী প্রত্যহ অভুক্ত থেকে দেখতেন সভায় আগত কুব্জ-বামন পর্যন্ত সকলের ভোজন হয়েছে কিনা। কেবল দুই রাষ্ট্রের লোক যুধিষ্ঠিরকে কর দেয় নি—বৈবাহিক সম্বন্ধের জন্য পাঞ্চালগণ এবং সখিত্বের জন্য অন্ধক ও বৃষ্ণিবংশীয়গণ। রাজসূয় যজ্ঞ ক’রে যুধিষ্ঠির হরিশ্চন্দ্রের ন্যায় সমৃদ্ধিলাভ করেছেন, তা দেখে আমার আর জীবনধারণের প্রয়োজন কি?

 ধৃতরাষ্ট্র বললেন, পুত্র, যুধিষ্ঠির তোমার প্রতি বিদ্বেষ করে না, তার যেমন অর্থবল ও মিত্রবল আছে তোমারও তেমন আছে। তোমার আর পাণ্ডবদের একই পিতামহ। ভ্রাতার সম্পত্তি কেন হরণ করতে ইচ্ছা কর? যদি যজ্ঞ ক’রে ঐশ্বর্য লাভ করতে চাও তবে ঋত্বিকরা তার আয়োজন করুন। তুমি যজ্ঞে ধনদান কর, কাম্যবস্তু ভোগ কর, স্ত্রীদের সঙ্গে বিহার কর, কিন্তু অধর্ম থেকে নিবৃত্ত হও।

  1. ১.০ ১.১ ১.২ ১.৩ মেগাস্থেনিসের ভারতবিবরণে এই সকলের উল্লেখ আছে।