পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৬
মহাভারত

 দুর্যোধন বললেন, যার নিজের বুদ্ধি নেই, কেবল বহু শাস্ত্র শুনেছে, সে শাস্ত্রার্থ বোঝে না, দর্বী (হাতা) যেমন সুপের (দালের) স্বাদ বোঝে না। আপনি পরের বুদ্ধিতে চ’লে আমাকে ভোলাচ্ছেন কেন? বৃহস্পতি বলেছেন, রাজার আচরণ সাধারণের আচরণ থেকে ভিন্ন, রাজা সযত্নে স্বার্থ চিন্তা করবেন। মহারাজ, জয়লাভই ক্ষত্রিয়ের বৃত্তি, ধর্মাধর্ম বিচারের প্রয়োজন নেই। অমুক শত্রু, অমুক মিত্র, এরূপ কোনও লেখ্য প্রমাণ নাই, চিহ্ণও নেই; যে লোক সন্তাপের কারণ সেই শত্রু। জাতি অনুসারে কেউ শত্রু হয় না, বৃত্তি সমান হলেই শত্রুতা হয়।

 শকুনি বললেন, যুধিষ্ঠিরের যে সমৃদ্ধি দেখে তুমি সন্তপ্ত হচ্ছ তা আমি দ্যূতক্রীড়ায় হরণ করব, তাকে আহ্বান কর। আমি সুদক্ষ দ্যূতজ্ঞ, সেনার সম্মুখীন না হয়ে পাশা খেলেই অজ্ঞ পাণ্ডবদের জয় করব তাতে সন্দেহ নেই। পণই আমার ধনু, অক্ষই আমার বাণ, ক্ষেপণের দক্ষতাই আমার ধনুর্গণ, আসনই আমার রথ। ধৃতরাষ্ট্র বললেন, আমি মহাত্মা বিদুরের মতে চ’লে থাকি, তাঁর সঙ্গে কথা ব’লে কর্তব্য স্থির করব। পুত্র, প্রবলের সঙ্গে কলহ করা আমার মত নয়, কলহ অলৌহময় অস্ত্রস্বরূপ, তাতে বিপ্লব উৎপন্ন হয়। দুর্যোধন বললেন, বিদুর আপনার বুদ্ধিনাশ করবেন তাতে সংশয় নেই, তিনি পাণ্ডবদের হিত যেমন চান তেমন আমাদের চান না। প্রাচীন কালের লোকেরাও দ্যূতক্রীড়া করেছেন, তাতে বিপদ বা যুদ্ধের সম্ভাবনা নেই। দৈব যেমন আমাদের তেমন পাণ্ডবদেরও সহায় হ’তে পারেন। আপনি মাতুল শকুনির বাক্যে সম্মত হয়ে পাণ্ডবদের দ্যূতসভায় আনবার জন্য আজ্ঞা দিন।

 ধৃতরাষ্ট্র অবশেষে অনিচ্ছায় সম্মতি দিলেন এবং সংবাদ নিয়ে জানলেন যে দ্যূতসভানির্মাণ সম্পূর্ণ হয়েছে। তখন তিনি তাঁর মুখ্য মন্ত্রী বিদুরকে বললেন, তুমি শীঘ্র গিয়ে যুধিষ্ঠিরকে ডেকে আন, তিনি ভ্রাতাদের সঙ্গে এসে আমাদের সভা দেখুন এবং সুহৃদ্‌ভাবে দ্যূতক্রীড়া করুন। বিদুর বললেন, মহারাজ, আপনার আদেশের প্রশংসা করতে পারি না, দ্যূতের ফলে বংশনাশ হবে, পুত্রদের মধ্যে কলহ হবে। ধৃতরাষ্ট্র বললেন, বিদুর, দৈব যদি প্রতিকূল না হয় তবে কলহ আমাকে দুঃখ দিতে পারবে না, বিধাতা সর্বজগৎ দৈবের বশে রেখেছেন। তুমি আমার আজ্ঞা পালন কর।