পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সভাপর্ব
১২৭

১৪। যুধিষ্ঠিরাদির দ্যূতসভায় আগমন

 ধৃতরাষ্ট্রের আজ্ঞাবশে বিদুর ইন্দ্রপ্রস্থে গেলেন। যুধিষ্ঠির বললেন, ক্ষত্তা[১], মনে হচ্ছে আপনার মনে সুখ নেই, আপনি কুশলে এসেছেন তো? বৃদ্ধ রাজার পুত্র ও প্রজারা বশে আছে তো? কুশল জ্ঞাপনের পর বিদুর বললেন, রাজা যুধিষ্ঠির, কুরুরাজ ধৃতরাষ্ট্র তোমাকে এই বলেছেন।—তোমার ভ্রাতারা এখানে যে সভা নির্মাণ করেছেন তা তোমাদের সভারই তুল্য, এসে দেখে যাও। তুমি তোমার ভ্রাতাদের সঙ্গে এখানে এসে সুহৃদ্‌ভাবে দ্যূতক্রীড়া কর, আমোদ কর। তোমরা এলে আমরা সকলেই আনন্দিত হব।

 যুধিষ্ঠির বললেন, দ্যূত থেকে কলহ উৎপন্ন হয়, বুদ্ধিমান ব্যক্তির তা রুচিকর নয়। আপনার কি মত? বিদুর বললেন, আমি জানি যে দ্যূত অনর্থের মূল, তার নিবারণের চেষ্টাও আমি করেছিলাম, তথাপি ধৃতরাষ্ট্র আমাকে পাঠিয়েছেন। যুধিষ্ঠির, তুমি বিদ্বান, যা শ্রেয় তাই কর। যুধিষ্ঠির বললেন, শকুনির সঙ্গে খেলতে আমার ইচ্ছা নেই, কিন্তু ধৃতরাষ্ট্র যখন ডেকেছেন তখন আমি নিবৃত্ত হ’তে পারি না।

 পরদিন যুধিষ্ঠির দ্রৌপদী, ভ্রাতৃগণ ও পরিজনদের নিয়ে হস্তিনাপুরে যাত্রা করলেন। সেখানে উপস্থিত হয়ে ভীষ্ম দ্রোণ কর্ণ কৃপ দুর্যোধন শল্য শকুনি প্রভৃতির সঙ্গে দেখা ক’রে ধৃতরাষ্ট্রের গৃহে গেলেন। গান্ধারী তাঁকে আশীর্বাদ করলেন, ধৃতরাষ্ট্রও পঞ্চপাণ্ডবের মস্তকাঘ্রাণ করলেন। দ্রৌপদীর অত্যুজ্জ্বল বেশভূষা দেখে ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রবধূরা বিশেষ সন্তুষ্ট হলেন না। পাণ্ডবগণ সুখে রাত্রিযাপন ক’রে পরদিন প্রাতঃকৃত্যের পর দ্যূতসভায় প্রবেশ করলেন।

 শকুনি বললেন, রাজা যুধিষ্ঠির, সভায় সকলে তোমার জন্য অপেক্ষা করছেন, এখন খেলা আরম্ভ হ’ক। যুধিষ্ঠির বললেন, দ্যূতক্রীড়া শঠতাময় ও পাপজনক, তাতে ক্ষত্রোচিত পরাক্রম নেই, নীতিসংগতও নয়। শঠতায় গৌরব নেই, শকুনি, আপনি অন্যায়ভাবে আমাদের জয় করবেন না। শকুনি বললেন, যে পূর্বেই জানে পাশা ফেললে কোন্ সংখ্যা পড়বে, যে শঠতার প্রণালী বোঝে, এবং যে অক্ষক্রীড়ায় নিপুণ সে সমস্তই সইতে পারে। যুধিষ্ঠির, নিপুণ দ্যূতকারের হাতে বিপক্ষের পরাজয় হয়, সে কারণে আমাদেরই পরাজয়ের আশঙ্কা আছে, তথাপি আমরা খেলব। যুধিষ্ঠির বললেন, আমি শঠতার দ্বারা সুখ বা ধন লাভ করতে


  1. দাসীপুত্র। বিদুরের উপাধি।