পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৮
মহাভারত

চাই না, ধূর্ত দ্যূতকারের শঠতা প্রশংসনীয় নয়। শকুনি বললেন, যুধিষ্ঠির, বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ ও বিদ্বানরাও শঠতার দ্বারা পরস্পরকে জয় করতে চেষ্টা করেন, এপ্রকার শঠতা নিন্দনীয় নয়। তবে তোমার যদি আপত্তি বা ভয় থাকে তবে খেলো না। যুধিষ্ঠির বললেন, আহ্বান করলে আমি নিবৃত্ত হই না, এই আমার ব্রত। এই সভায় কার সঙ্গে আমার খেলা হবে? পণ কে দেবে? দুর্যোধন উত্তর দিলেন, মহারাজ, আমিই পণের জন্য ধনরত্ন দেব, আমার মাতুল শকুনি আমার হয়ে খেলবেন। যুধিষ্ঠির বললেন, একজনের পরিবর্তে অন্যের খেলা রীতিবিরদ্ধে মনে করি। যাই হ’ক, যা ভাল বোঝ তাই কর।

১৫। দ্যূতক্রীড়া

 এই সময়ে ধৃতরাষ্ট্র এবং তাঁর পশ্চাতে অপ্রসন্নমনে ভীষ্ম দ্রোণ কৃপ ও বিদুর সভায় এসে আসন গ্রহণ করলেন। তার পর খেলা আরম্ভ হ’ল। যুধিষ্ঠির বললেন, রাজা দুর্যোধন, সাগরের আবর্ত থেকে উৎপন্ন এই মহামূল্য মণি যা আমার স্বর্ণহারে আছে তাই আমার পণ। তোমার পণ কি? দুর্যোধন উত্তর দিলেন, আমার অনেক মণি আর ধন আছে, সে সমস্তই আমার পণ। তখন শকুনি তাঁর পাশা ফেললেন এবং যুধিষ্ঠিরকে বললেন, এই জিতলাম।

 যুধিষ্ঠির বললেন, শকুনি, আপনি কপট ক্রীড়ায় আমার পণ জিতে নিলেন। যাই হ’ক, সহস্র সুবর্ণে পূর্ণ আমার অনেক মঞ্জুষা আছে, এবারে তাই আমার পণ। শকুনি পুনর্বার পাশা ফেলে বললেন, জিতেছি। তার পর যুধিষ্ঠির বললেন, সহস্র রথের সমমূল্য ব্যাঘ্রচমার্বত কিংকিণীজালমণ্ডিত সর্ব উপকরণ সমেত ওই উত্তম রথ যাতে আমি এখানে এসেছি, এবং তার কুমুদশভ্র আটটি অশ্ব আমার পণ। এই কথা শুনেই শকুনি পূর্ববৎ শঠতা অবলম্বন করে পাশা ফেলে বললেন, জিতেছি।

 তার পর যুধিষ্ঠির পর পর এইসকল পণ রাখলেন।—সালংকারা নৃত্যগীতাদিনিপুণা এক লক্ষ তরুণী দাসী; কর্মকুশল উষ্ণীষকুণ্ডলধারী নম্র স্বভাব এক লক্ষ যুবক দাস; এক হাজার উত্তম হস্তী; স্বর্ণধ্বজ ও পতাকায় শোভিত এক হাজার রথ যার প্রত্যেক রথী যুদ্ধকালে এবং অন্য কালেও সহস্র মুদ্রা মাসিক বেতন পান; গন্ধর্বরাজ চিত্ররথ অর্জুনকে যেসকল বিচিত্রবর্ণ অশ্ব দিয়েছিলেন; দশ হাজার রথ ও দশ হাজার শকট; ষাট হাজার বিশালবক্ষী বীর সৈনিক যারা দুগ্ধ পান করে এবং শালিতণ্ডুলের অন্ন খায়; স্বর্ণমুদ্রায় পূর্ণ চার শত ধনভাণ্ড। এ সমস্তই শকুনি শঠতার দ্বারা জয় করলেন।