পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সভাপর্ব
১২৯

 দ্যূতক্রীড়ায় এইরূপে যুধিষ্ঠিরের সর্বনাশ হচ্ছে দেখে বিদুর ধৃতরাষ্ট্রকে বললেন, মহারাজ, মুমূর্ষু ব্যক্তির ঔষধে রুচি হয় না, আমার বাক্যও হয়তো আপনার অপ্রিয় হবে, তথাপি বলছি শুনুন। এই দুর্যোধন জন্মগ্রহণ ক’রেই শৃগালের ন্যায় রব করেছিল, এ ভরতবংশ ধ্বংস করবে। আপনি জানেন যে অন্ধক যাদব আর ভোজবংশীয়গণ তাঁদেরই আত্মীয় কংসকে ত্যাগ করেছিলেন, এবং তাঁদেরই নিয়োগে কৃষ্ণ কংসকে বধ করেছিলেন। আপনি আদেশ দিন, সব্যসাচী অর্জুন দুর্যোধনকে বধ করবেন, এই পাপী নিহত হ’লে কৌরবগণ সুখী হবে। আপনি শৃগালতুল্য দুর্যোধনের বিনিময়ে শার্দূলতুল্য পাণ্ডবগণকে ক্রয় করুন। কুলরক্ষার প্রয়োজনে যদি একজনকে ত্যাগ করতে হয় তবে তাই করা উচিত; গ্রামরক্ষার জন্য কুল, জনপদ রক্ষার জন্য গ্রাম এবং আত্মরক্ষার জন্য পৃথিবীও ত্যাগ করা উচিত। দ্যূত থেকে কলহ ভেদ ও দারুণ শত্রুতা হয়, দুর্যোধন তাই সৃষ্টি করছে। মত্ত বৃষ যেমন নিজের শৃঙ্গ ভগ্ন করে, দুর্যোধন তেমন নিজের রাজ্য থেকে মঙ্গল দূর করছে। মহারাজ, দুর্যোধনের জয়ে আপনার খুব আনন্দ হচ্ছে, কিন্তু এ থেকেই যুদ্ধ আর লোকক্ষয় হবে। ধনের প্রতি আপনার আকর্ষণ আছে এবং তার জন্য আপনি মন্ত্রণা করেছেন তা জানি। এখন আপনার ভ্রাতুষ্পুত্র যুধিষ্ঠিরের সঙ্গে এই যে কলহ সৃষ্ট হ’ল এতে আমাদের মত নেই। হে প্রতীপ ও শান্তনুর বংশধরগণ, তোমরা আমার হিতবাক্য শোন, ঘোর অগ্নি প্রজ্বলিত হয়েছে, নির্বোধের অনুসরণ ক’রে তাতে প্রবেশ ক’রো না। এই অজাতশত্রু যুধিষ্ঠির, বৃকোদর, সব্যসাচী এবং নকুল-সহদেব যখন ক্রোধ সংবরণ করতে পারবেন না তখন তুমুল যুদ্ধসাগরে দ্বীপ রূপে কোন পুরুষকে আশ্রয় করবে? এই পার্বতদেশবাসী শকুনি কপটদ্যূতে পটু তা আমরা জানি, ও যেখান থেকে এসেছে সেখানেই চ’লে যাক, পাণ্ডবদের সঙ্গে তোমরা যুদ্ধ ক’রো না।

 দুর্যোধন বললেন, ক্ষত্তা, আপনি সর্বদাই আমাদের নিন্দা আর মূর্খ ভেবে অবজ্ঞা করেন। আপনি নির্লজ্জ, যা ইচ্ছা তাই বলছেন। নিজেকে কর্তা ভাববেন না, আমার কিসে হিত হবে তা আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি না। আমরা অনেক সয়েছি, আমাদের উত্ত্যক্ত করবেন না। একজনই শাসনকর্তা আছেন, দ্বিতীয় নেই; যিনি গর্ভস্থ শিশুকে শাসন করেন তিনিই আমার শাসক; তাঁর প্রেরণায় আমি জলস্রোতের ন্যায় চালিত হচ্ছি। যিনি পর্বত ও ভূমি বিদীর্ণ করেন তাঁর বুদ্ধিই মানুষের কার্য নিয়ন্ত্রিত করে। বলপূর্বক অন্যকে শাসন করতে