পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সভাপর্ব
১৩৫

বিপদ হবে তা জেনে বাখ। তোমরা দ্যূতের নিয়ম লঙ্ঘন করেছ, সভায় স্ত্রীলোক এনে বিবাদ করছ। ধর্ম নষ্ট হ’লে সভা দূষিত হয়। যুধিষ্ঠির নিজে বিজিত হবার পূর্বে দ্রৌপদীকে পণ রাখতে পারতেন, কিন্তু প্রভুত্ব হারাবার পর তা পারেন না।

 ধৃতরাষ্ট্রের অগ্নিহোত্রগৃহে একটা শৃগাল চিৎকার ক’রে উঠল, গর্দভ ও পক্ষীরাও ভয়ংকর রবে ডাকতে লাগল। অশুভ শব্দ শুনে বিদুর গান্ধারী ভীষ্ম দ্রোণ ও কৃপ ‘স্বস্তি স্বস্তি’ বললেন এবং ধৃতরাষ্ট্রকে জানালেন। তখন ধৃতরাষ্ট্র বললেন, মূর্খ দুর্যোধন, এই কৌরবসভায় তুমি পাণ্ডবগণের ধর্মপত্নীর সঙ্গে কথা বলেছ! তুমি মরেছ। তার পর তিনি দ্রৌপদীকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, পাঞ্চালী, তুমি আমার বধূদের মধ্যে শ্রেষ্ঠা এবং ধর্মশীলা সতী, আমার কাছে অভীষ্ট বর চাও।

 দ্রৌপদী বললেন, ভরতর্ষভ, এই বর দিন যেন সর্বধর্মচারী যুধিষ্ঠির দাসত্ব থেকে মুক্ত হন, আমার পুত্র প্রতিবিন্ধ্যকে কেউ যেন দাসপুত্র ব’লে না ডাকে। ধৃতরাষ্ট্র বললেন, কল্যাণী, যা বললে তাই হবে। তুমি দ্বিতীয় বর চাও, আমার মন বলছে একটিমাত্র বর তোমার যোগ্য নয়। দ্রৌপদী বললেন, মহারাজ, ভীমসেন ধনঞ্জয় আর নকুল-সহদেব দাসত্ব থেকে মুক্ত ও স্বাধীন হ’ন। ধৃতরাষ্ট্র বললেন, পুত্রী, তাই হবে। দুটি বরও তোমার পক্ষে যথেষ্ট নয়, তৃতীয় বর চাও। দ্রৌপদী বললেন মহারাজ, লোভে ধর্মনাশ হয়, আমি আর বর চাই না। এই বিধান আছে যে বৈশ্য এক বর, ক্ষত্রিয়াণী দুই বর, রাজা তিন বর এবং ব্রাহ্মণ শত বর নিতে পারেন। আমার স্বামীরা দাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে পুণ্যকর্মের বলেই শ্রেয়োলাভ করবেন।

 কর্ণ বললেন, দ্রৌপদী যা করলেন কোনও নারী তা পূর্বে করেছেন এমন শুনি নি, দুঃখসাগরে নিমগ্ন পাণ্ডবগণকে ইনি নৌকার ন্যায় পার করেছেন। এই কথা শুনে ভীম দুঃখিত হয়ে বললেন, মহর্ষি দেবলের মতে পুরুষের তেজ তিনটি—অপত্য, কর্ম ও বিদ্যা। পত্নীর অপমানে আমাদের সন্তান দূষিত হ’ল। অর্জুন বললেন, হীন লোকে কি বলে না বলে তা নিয়ে সজ্জনরা জল্পনা করেন না, তাঁরা নিজ ক্ষমতায় নির্ভর করেন। ভীম যুধিষ্ঠিরকে বললেন বিতর্কে প্রয়োজন কি, মহারাজ, আমি আজই সমস্ত শত্রুকে বিনাশ করব, তার পর আপনি পৃথিবী শাসন করবেন।

 যুধিষ্ঠির ভীমকে নিবৃত্ত ক’রে বসিয়ে দিলেন এবং ধৃতরাষ্ট্রের কাছে গিয়ে কৃতাঞ্জলি হয়ে বললেন, মহারাজ, আমরা সর্বদাই আপনার অধীন, আদেশ করুন এখন কি করব। ধৃতরাষ্ট্র বললেন, অজাতশত্রু, তোমার মঙ্গল হ’ক। সমস্ত ধন সমেত তোমরা নির্বিঘ্নে ফিরে যাও, নিজ রাজ্য শাসন কর। আমি বৃদ্ধ, তোমাদের