পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৬
মহাভারত

হিতকর আদেশই দিচ্ছি। তুমি ধর্মের সূক্ষ্ম গতি জান, তুমি বিনীত, বৃদ্ধদের সেবক। যাঁরা উত্তম পুরুষ তাঁরা কারও শত্রুতা করেন না, পরের দোষ না দেখে গুণই দেখেন। এই সভায় তুমি সাধুজনোচিত আচরণ করেছ। বৎস, দুর্যোধনের নিষ্ঠুরতা মনে রেখো না। আমি তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী বৃদ্ধ অন্ধ পিতা, আমাকে আর তোমার মাতা গান্ধারীকে দেখো। তোমাদের দেখবার জন্য এবং এই দুই পক্ষের বলাবল জানবার জন্য আমি দ্যূতসভায় মত দিয়েছিলাম। তোমার ন্যায় শাসনকর্তা এবং বিদুরের ন্যায় মন্ত্রী থাকতে কুরুবংশীয়গণের কোনও ভয় নেই। এখন তুমি ইন্দ্রপ্রস্থে যাও, ভ্রাতাদের সঙ্গে তোমার সম্প্রীতি এবং ধর্মে মতি থাকুক।


॥অনুদ্যূতপর্বাধ্যায়॥

১৭। পুনর্বার দ্যূতক্রীড়া

 পাণ্ডবগণ চ’লে গেলে দুঃশাসন বললেন, আমরা অতি কষ্টে যা হস্তগত করেছিলাম বৃদ্ধ তা নষ্ট করলেন। তার পর কর্ণ আর শকুনির সঙ্গে মন্ত্রণা ক’রে দুর্যোধন তাঁর পিতার কাছে গিয়ে বললেন, মহারাজ, বৃহস্পতি বলেছেন, যে শত্রুরা যুদ্ধে বা যুদ্ধ না করেই অনিষ্ট করে তাদের সকল উপায়ে বিনষ্ট করবে। দংশনে উদ্যত সর্পকে কণ্ঠে ও পৃষ্ঠে ধারণ ক’রে কে পরিত্যাগ করে? পিতা, ক্রুদ্ধ পাণ্ডবরা আমাদের নিঃশেষ করবে, আমরা তাদের নিগৃহীত করেছি, তারা ক্ষমা করবে না। আমরা আবার তাদের সঙ্গে খেলতে চাই। এবারে দ্যূতক্রীড়ায় এই পণ হবে—পরাজিত পক্ষ মৃগচর্ম ধারণ ক’রে বার বৎসর মহারণ্যে বাস এবং তার পর এক বৎসর অজ্ঞাতবাস করবে। আমরা দ্যূত জয়ী হয়ে বার বৎসরে রাজ্যে দৃঢ়প্রতিষ্ঠিত হব, মিত্র ও সৈন্য সংগ্রহ করব, তের বৎসর পরে পাণ্ডবরা ফিরে এলে আমরা তাদের পরাজিত করব। ধৃতরাষ্ট্র সম্মত হয়ে বললেন, পাণ্ডবদের শীঘ্র ফিরিয়ে আন।

 জ্ঞানবতী গান্ধারী তাঁর পতিকে বললেন, দুর্যোধন জন্মগ্রহণ করলে বিদুর সেই কুলাঙ্গারকে পরলোকে পাঠাতে বলেছিলেন। মহারাজ, তুমি নিজের দোষে দুঃখসাগরে মগ্ন হয়ো না, নির্বোধ অশিষ্ট পুত্রদের কথা শুনো না। পাণ্ডবরা শান্ত হয়েছে, আবার কেন তাদের ক্রুদ্ধ করছ? তুমি স্নেহবশে দুর্যোধনকে ত্যাগ করতে পার নি, এখন তার ফলে বংশনাশ হবে। ধৃতরাষ্ট্র বললেন, আমাদের বংশ নষ্টই হবে, আমি তা নিবারণ করতে পারছি না। আমার পুত্রেরা যা ইচ্ছা হয় করুক।

 দুর্যোধনের দূত প্রাতিকামী যুধিষ্ঠিরের কাছে গিয়ে জানালে যে ধৃতরাষ্ট্র