পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৮
মহাভারত

 অর্জুন বললেন, কেবল বাক্য দ্বারা সংকল্প ব্যক্ত করা যায় না, চতুর্দশ বৎসরে যা হবে তা সকলেই দেখতে পাবেন। ভীমসেন, আপনার প্রিয়কামনায় আমি প্রতিজ্ঞা করছি— এই ঈর্ষাকারী কটূভাষী অহংকৃত কর্ণকে আমি যুদ্ধে শরাঘাতে বধ করব। যদি এই সত্য পালন করতে না পারি তবে হিমালয় বিচলিত হবে, দিবাকর নিষ্প্রভ হবে, চন্দ্রের শৈত্য নষ্ট হবে। সহদেব বললেন, গান্ধার-কুলাঙ্গার শকুনি, তোমার সম্বন্ধে ভীম যা বলেছেন তা আমি করব। নকুল বললেন, দুর্যোধনকে তুষ্ট করবার জন্য যারা এই সভায় দ্রৌপদীকে কটুকথা শুনিয়েছে সেই দুর্বৃত্তদের আমি যমালয়ে পাঠাব, ধর্মরাজ আর দ্রৌপদীর নির্দেশ অনুসারে আমি পৃথিবী থেকে ধার্তরাষ্ট্রগণকে লুপ্ত করব।

১৮। পাণ্ডবগণের বনযাত্রা

 বৃদ্ধ পিতামহ ভীষ্ম, ধৃতরাষ্ট্র, তাঁর পুত্রগণ, দ্রোণ, কৃপ, অশ্বত্থামা, সোমদত্ত, বাহ্ণীকরাজ, বিদুর, যুযুৎসু, সঞ্জয় প্রভৃতিকে সম্বোধন ক’রে যুধিষ্ঠির বললেন, আমি বনগমনের অনুমতি চাচ্ছি, ফিরে এসে আবার আপনাদের দর্শনলাভ করব। সভাসদ্‌গণ লজ্জায় কিছু বলতে পারলেন না, কেবল মনে মনে যুধিষ্ঠিরের কল্যাণ কামনা করলেন। বিদুর বললেন, আর্যা কুন্তী বৃদ্ধা এবং সুখভোগে অভ্যস্তা, তিনি সসম্মানে আমার গৃহেই বাস করবেন। পাণ্ডবগণ, তোমাদের সর্ববিষয়ে মঙ্গল হ’ক। যুধিষ্ঠিরাদি বললেন, নিষ্পাপ পিতৃব্য, আপনি আমাদের পিতার সমান, যা আজ্ঞা করবেন তাই পালন করব।

 বিদুর বললেন, যুধিষ্ঠির, অধর্ম দ্বারা বিজিত হ’লে পরাজয়ের দুঃখ হয় না। তুমি ধর্মজ্ঞ, অর্জুন যুদ্ধজ্ঞ, ভীম শত্রুহন্তা, নকুল অর্থ সংগ্রহী, সহদেব নিয়মপালক, ধৌম্য শ্রেষ্ঠ ব্রহ্মবিৎ, দ্রৌপদী ধর্মচারিণী। তোমরা পরস্পরের প্রিয়, প্রিয়ভাষী, তোমাদের মধ্যে কেউ ভেদ জন্মাতে পারবে না। আপৎকালে এবং সর্ব কার্যে তোমরা বিবেচনা করে চ’লো। তোমাদের মঙ্গল হ’ক, নির্বিঘ্নে ফিরে এস, আবার তোমাদের দেখব।

 কুন্তী ও অন্যান্য নারীদের কাছে গিয়ে দ্রৌপদী বিদায় চাইলেন। অন্তঃপুরে ক্রন্দনধ্বনি উঠল। কুন্তী শোকাকুল হয়ে বলেন, বৎসে, তুমি সর্বগুণান্বিতা, আমার কোনও উপদেশ দেওয়া অনাবশ্যক। কৌরবগণ ভাগ্যবান তাই তারা তোমার কোপে দগ্ধ হয় নি। তুমি নির্বিঘ্নে যাত্রা কর, আমি সর্বদাই তোমার