পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সভাপর্ব
১৩৯

শুভচিন্তা করব। আমার পুত্র সহদেবকে দেখো, যেন সে এই বিপদে অবসন্ন না হয়।

 দ্রৌপদী আলুলায়িত কেশে রক্তাক্ত একবস্ত্রে সরোদনে যাত্রা করলেন। নিরাভরণ পুত্রগণকে আলিঙ্গন ক’রে কুন্তী বললেন, তোমরা ধার্মিক সচ্চরিত্র উদারপ্রকৃতি ভগবদ্‌ভক্ত ও যজ্ঞপরায়ণ, তোমাদের ভাগ্যে এই বিপর্যয় কেন হ’ল? তোমাদের পিতা ধন্য, এই বিপদ তাঁকে দেখতে হ’ল না, স্বর্গগতা মাদ্রীও ভাগ্যবতী। আমি তোমাদের ছেড়ে থাকতে পারব না, সঙ্গে যাব। হা কৃষ্ণ দ্বারকাবাসী, কোথায় আছ, আমাদের দুঃখ থেকে ত্রাণ করছ না কেন?

 পাণ্ডবগণ কুন্তীকে সান্ত্বনা দিয়ে যাত্রা করলেন। দুর্যোধনাদির পত্নীরা দ্রৌপদীর অপমানের বিবরণ শুনে কৌরবগণের নিন্দা ক’রে উচ্চকণ্ঠে রোদন করতে লাগলেন। পুত্রদের অন্যায়ের কথা ভেবে ধৃতরাষ্ট্র উদ্‌বেগ ও অশান্তি ভোগ করছিলেন। তিনি বিদুরকে ডাকিয়ে বললেন, পাণ্ডবগণ কি ভাবে যাচ্ছেন তা আমি জানতে চাই, তুমি বর্ণনা কর।

 বিদুর বললেন, ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির বস্ত্রে মুখে আবৃত ক’রে চলেছেন। মহারাজ, আপনার পুত্রেরা কপট উপায়ে রাজ্য হরণ করলেও যুধিষ্ঠিরের ধর্মবুদ্ধি বিচলিত হয় নি। তিনি দয়ালু, তাই ক্রুদ্ধ হয়েও চক্ষু উন্মীলন করছেন না, পাছে আপনার পুত্রগণ দগ্ধ হয়। শত্রুদের উপর বাহুবল প্রয়োগ করবেন তা জানাবার জন্য ভীম তাঁর বাহদ্বয় প্রসারিত করে চলেছেন। বাণবর্ষণের পূর্বাভাষরূপে অর্জুন বালুকা বর্ষণ করতে করতে যাচ্ছেন। সহদেব মুখ ঢেকে এবং নকুল সর্বাঙ্গে ধূলি মেখে বিহ্বলচিত্তে চলেছেন। দ্রৌপদী তাঁর কেশজালে মুখে আচ্ছাদিত ক’রে সরোদনে অনুগমন করছেন। পুরোহিত ধৌম্য হাতে কুশ নিয়ে যমদেবতার সাম মন্ত্র গান ক’রে পরোভাগে চলেছেন। পুরবাসিগণ বিলাপ করছে—হায়, আমাদের রক্ষকগণ চ’লে যাচ্ছেন! মহারাজ, পাণ্ডবগণের যাত্রাকালে বিনা মেঘে বিদ্যুৎ, ভূমিকম্প, অকালে সূর্যগ্রহণ প্রভৃতি দুর্লক্ষণ দেখা দিয়েছে।

 দেবর্ষি নারদ সভামধ্যে বললেন, দুর্যোধনের অপরাধে এবং ভীমার্জুনের বলে এখন থেকে চতুর্দশ বর্ষে কৌরবগণ বিনষ্ট হবে। এই ব’লে তিনি অন্তর্হিত হলেন। বিপৎসাগরে দ্রোণাচার্যই দ্বীপস্বরূপ এই মনে ক’রে দুর্যোধন কর্ণ ও শকুনি তাঁকেই রাজ্য নিবেদন করলেন। দ্রোণ বললেন, তোমরা আমার শরণাগত তাই তোমাদের ত্যাগ করতে পারব না। পাণ্ডবরা ফিরে এসে তোমাদের উপর প্রতিশোধ নেবে। বীরশ্রেষ্ঠ অর্জুনের সঙ্গে আমার যুদ্ধ করতে হবে এর চেয়ে অধিক দুঃখ