পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বনপর্ব

॥আরণ্যকপর্বাধ্যায়॥

১। যুধিষ্ঠির ও অনুগামী বিপ্রগণ—সূর্যদত্ত তাম্রস্থালী

 পঞ্চপাণ্ডব ও দ্রৌপদী হস্তিনাপুর থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়ে উত্তরমুখে যাত্রা করলেন। ইন্দ্রসেন প্রভৃতি চোদ্দ জন ভৃত্য স্ত্রীদের নিয়ে রথে চ’ড়ে তাঁদের পশ্চাতে গেল। পুরবাসীরা কৃতাঞ্জলি হয়ে পাণ্ডবগণকে বললে, আমাদের ত্যাগ ক’রে আপনারা কোথায় যাচ্ছেন? নিষ্ঠুর শত্রুরা অধর্ম ক’রে আপনাদের জয় করেছে এই সংবাদ শুনে উদ্‌বিগ্ন হয়ে আমরা এসেছি। আমরা আপনাদের ভক্ত অনুরক্ত ও হিতকামী, কুরাজার অধিষ্ঠিত রাজ্যে আমরা বাস করব না। ধর্ম-অর্থ-কাম এই ত্রিবর্গের সাধক এবং লোকাচারসম্মত ও বেদোক্ত সকল গুণ আপনাদের আছে, আমরা আপনাদের সঙ্গেই থাকব।

 যুধিষ্ঠির বললেন, আমরা ধন্য, ব্রাহ্মণপ্রমুখ প্রজারা আমাদের স্নেহ করেন, তাই যে গুণ আমাদের নেই তাও আছে বলছেন। আমরা আপনাদের কাছে এই অনুরোধ করছি, স্নেহ ও অনুকম্পার বশবর্তী হয়ে অন্যথা করবেন না।—পিতামহ ভীষ্ম, রাজা ধৃতরাষ্ট্র, বিদুর, আমাদের জননী, এবং বহু সুহৃৎ হস্তিনাপুরে রয়েছেন, তাঁরা শোকে বিহ্বল হয়ে আছেন, আপনারা তাঁদের সযত্নে পালন করুন, তাতেই আমাদের মঙ্গল হবে। আপনারা বহুদূরে এসে পড়েছেন, এখন ফিরে যান। আমাদের স্বজনবর্গের ভার আপনাদের উপর রইল, তাঁদের প্রতি স্নেহদৃষ্টি রাখবেন, তাতেই আমরা তুষ্ট হব।

 ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরের কথায় প্রজাবর্গ ‘হা রাজা’ ব’লে আর্তনাদ ক’রে উঠল এবং অনিচ্ছায় বিদায় নিয়ে শোকাতুরচিত্তে ফিরে গেল। তারা চ’লে গেলে পাণ্ডবগণ রথারোহণে যাত্রা করলেন এবং দিনশেষে গঙ্গাতীরে প্রমাণ নামক মহাবটবৃক্ষের নিকট উপস্থিত হলেন। সেই রাত্রিতে তাঁরা কেবল জলপান ক’রে রইলেন। শিষ্য ও পরিজন সহ কয়েকজন ব্রাহ্মণ পাণ্ডবদের অনুগমন করেছিলেন, তাঁরা সেই রমণীয় ও ভয়সংকুল সন্ধ্যাকালে, হোমাগ্নি জ্বেলে বেদধ্বনি ও বিবিধ আলাপ করতে লাগলেন এবং মধুর বাক্যে যুধিষ্ঠিরকে আশ্বাস দিয়ে সমস্ত রাত্রি যাপন করলেন।