পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
১৪৩

অতএব কোনও ধর্মকার্য কামনাপূর্বক করা উচিত নয়। ব্রাহ্মণদের ভরণের জন্য আপনি তপ ও যোগ দ্বারা সিদ্ধিলাভের চেষ্টা করুন, সিদ্ধ ব্যক্তি যা ইচ্ছা করেন তপস্যার প্রভাবে তাই করতে পারেন।

 যুধিষ্ঠির তাঁর ভ্রাতাদের কাছে গিয়ে পুরোহিত ধৌম্যকে বললেন, বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণগণ আমার সঙ্গে যাচ্ছেন, কিন্তু আমি দুঃখী, তাঁদের পালন করতে অক্ষম, পরিত্যাগ করতেও পারছি না। কি কর্তব্য বলুন! ক্ষণকাল চিন্তা ক’রে ধৌম্য বললেন, সূর্যই সর্বভূতের পিতা, প্রাণীদের প্রাণধারণের নিমিত্ত তিনিই অন্নস্বরূপ, তুমি তাঁর শরণাপন্ন হও। ধৌম্য সূর্যের অষ্টোত্তর শত নাম শিখিয়ে দিলে যুধিষ্ঠির পুষ্প ও নৈবেদ্য দিয়ে সূর্যের পূজা করলেন এবং কঠোর তপস্যা ও স্তবপাঠে রত হলেন। সূর্যদেব প্রসন্ন হয়ে দীপ্যমান মূর্তিতে আবির্ভূত হয়ে বললেন, রাজা, তোমার যা অভীষ্ট আছে সবই তুমি পাবে, বনবাসের স্বাদশ বৎসর আমি তোমাকে অন্ন দেব। এই তাম্রময় স্থালী নাও, পাঞ্চালী পাকশালায় গিয়ে এই পাত্রে ফল মূল আমিষ শাকাদি রন্ধন করে যতক্ষণ অনাহারে থাকবেন ততক্ষণ চতুর্বিধ অন্ন অক্ষয় হয়ে থাকবে। চতুর্দশ বৎসর পরে তুমি আবার রাজ্যলাভ করবে। এই ব’লে সূর্য অন্তর্হিত হলেন।

 বরলাভ ক’রে যুধিষ্ঠির ধৌম্যকে প্রণাম এবং ভ্রাতাদের আলিঙ্গন করলেন, এবং তখনই দ্রৌপদীর সঙ্গে পাকশালায় গিয়ে রন্ধন করলেন। চর্ব্য চূষ্য লেহ্য পেয় এই চতুর্বিধ খাদ্য প্রস্তুত হ’ল, অল্প হলেও তা প্রয়োজনমত বাড়তে লাগল। ব্রাহ্মণভোজন শেষ হ’লে যুধিষ্ঠিরের ভ্রাতারা খেলেন, তার পর বিঘস নামক অবশিষ্ট অন্ন যুধিষ্ঠির এবং সর্বশেষে দ্রৌপদী খেলেন। তখন অন্ন নিঃশেষ হয়ে গেল। সূর্যের বরপ্রভাবে এইরূপে যুধিষ্ঠির ব্রাহ্মণগণকে অভিলষিত বস্তু দান করতে লাগলেন। কিছু কাল পরে পাণ্ডবগণ ধৌম্য ও অন্য ব্রাহ্মণদের সঙ্গে কাম্যকবনে যাত্রা করলেন।

২। ধৃতরাষ্ট্রের অস্থির মতি

 পাণ্ডবদের বনযাত্রার পর প্রজ্ঞাচক্ষু[১] ধৃতরাষ্ট্র বিদুরকে বললেন, তোমার বুদ্ধি নির্মল, ধর্মের সূক্ষ্ম তত্ত্ব তুমি জান, কুরুবংশীয়গণকে তুমি সমদৃষ্টিতে দেখ; যাতে কুরুপাণ্ডবের হিত হয় এমন উপায় বল। বিদুর বললেন, মহারাজ, অর্থ কাম

  1. যাঁর চক্ষুর ক্রিয়া বুদ্ধি দ্বারা সম্পন্ন হয়।