পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৪
মহাভারত

ও মোক্ষ এই ত্রিবর্গের মূল ধর্ম; রাজ্যেরও মূল ধর্ম। সেই ধর্মকে বঞ্চিত ক’রে শকুনি প্রভৃতি পাপাত্মারা যুধিষ্ঠিরকে পরাজিত করেছে। আপনি পূর্বে যেমন পাণ্ডবদের সমস্ত সম্পত্তি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, এখন আবার সেইরূপ দিন। পাণ্ডবদের তোষণ এবং শকুনির অবমাননা—এই আপনার সর্বপ্রধান কার্য, এই যদি করেন তবেই আপনার পুত্রদের কিছু রাজ্য রক্ষা পাবে। দুর্যোধন যদি সন্তুষ্ট হয়ে পাণ্ডবদের সঙ্গে একযোগে রাজ্য ভোগ করে তবে আপনার দুঃখ থাকবে না। যদি তা না হয় তবে দুর্যোধনকে নিগৃহীত ক’রে যুধিষ্ঠিরকে রাজ্যের আধিপত্য দিন, দুর্যোধন শকুনি আর কর্ণ পাণ্ডবগণের অনুগত হ’ক, দুঃশাসন সভামধ্যে ভীমসেন আর দ্রৌপদীর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করুক। এ ছাড়া আর কি পরামর্শ আমি দিতে পারি?

 ধৃতরাষ্ট্র বললেন, তুমি পূর্বে দ্যূতসভায় যা বলেছিলে এখন আবার তাই বলছ। তোমার কথা পাণ্ডবদের হিতকর, আমাদের অহিতকর। পাণ্ডবদের জন্য নিজের পুত্রকে কি ক’রে ত্যাগ করব? পাণ্ডবরাও আমার পুত্র বটে, কিন্তু দুর্যোধন আমার দেহ থেকে উৎপন্ন। বিদুর, আমি তোমার বহু সম্মান করে থাকি, কিন্তু তুমি যা বলছ সবই কুটিলতাময়। তুমি চ’লে যাও বা থাক, যা ইচ্ছা কর। অসতী স্ত্রীর সঙ্গে মিষ্ট ব্যবহার করলেও সে স্বামিত্যাগ করে। ধৃতরাষ্ট্র এই ব’লে সহসা অন্তঃপুরে চ’লে গেলেন। বিদুর হতাশ হয়ে পাণ্ডবদের উদ্দেশে যাত্রা করলেন।


 পাণ্ডবগণ পশ্চিম দিকে যাত্রা ক’রে সরস্বতী নদীর তীরে সমতল মরুপ্রদেশের নিকটবর্তী কাম্যকবনে এলেন। পশুপক্ষিসমাকুল সেই বনে তাঁরা মুনিগণের সঙ্গে বাস করতে লাগলেন। বিদুর রথারোহণে আসছেন দেখে যুধিষ্ঠির ভীমকে বললেন, ইনি কি আবার আমাদের দ্যূতক্রীড়ায় ডাকতে এসেছেন? শকুনি কি আমাদের অস্ত্রশস্ত্রও জয় করে নিতে চায়?

 যুধিষ্ঠিরাদি আসন থেকে উঠে বিদুরের সংবর্ধনা করলেন। বিশ্রামের পর বিদুর বললেন, ধৃতরাষ্ট্র আমার কাছে হিতকর মন্ত্রণা চেয়েছিলেন, কিন্তু আমার কথা তাঁর রুচিকর হয় নি, তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে আমাকে বললেন, যেখানে ইচ্ছা চ’লে যাও, রাজ্যশাসনের জন্য তোমার সাহায্য আর আমি চাই না। যুধিষ্ঠির, ধৃতরাষ্ট্র আমাকে ত্যাগ করেছেন, এখন আমি তোমাকে সদুপদেশ দিতে এসেছি। পূর্বে তোমাকে যা বলেছিলাম এখনও তাই বলছি।—শত্রু কর্তৃক নির্যাতিত হয়েও যে সহিষ্ণু হয়ে