কালপ্রতীক্ষা করে সে একাকীই সমস্ত পৃথিবী ভোগ করে। সহায়দের সঙ্গে যে সমভাবে বিষয় ভোগ করে, সহায়রা তার দুঃখেরও অংশভাগী হয়। সহায়সংগ্রহের এই উপায়, তাতেই রাজ্যলাভ হয়। পাণ্ডুপুত্র, অন্নাদি সমস্তই সমভাবে সহায়দের সঙ্গে ভোগ করবে, অনর্থক কথা বলবে না, আত্মশ্লাঘা করবে না, এইরূপ আচরণেই রাজারা সমৃদ্ধি লাভ করেন।
বিদূর চ’লে গেলে ধৃতরাষ্ট্রের অনুতাপ হ’ল। তিনি সঞ্জয়কে বললেন, বিদুর আমার ভ্রাতা সুহৃৎ এবং সাক্ষাৎ ধর্ম, তাঁর বিচ্ছেদে আমার হৃদয় বিদীর্ণ হচ্ছে, তুমি শীঘ্র তাঁকে নিয়ে এস। যাও সঞ্জয়, তিনি বেঁচে আছেন কিনা দেখ। আমি পাপী তাই ক্রোধবশে তাঁকে দূর ক’রে দিয়েছি, তিনি না এলে আমি প্রাণত্যাগ করব। সঞ্জয় অবিলম্বে কাম্যকবনে উপস্থিত হলেন। কুশলজিজ্ঞাসার পর সঞ্জয় বললেন, ক্ষত্তা, রাজা ধৃতরাষ্ট্র আপনাকে স্মরণ করেছেন, পাণ্ডবদের অনুমতি নিয়ে সত্বর হস্তিনাপুরে চলুন, রাজার প্রাণরক্ষা করুন।
বিদুর ফিরে গেলেন। ধৃতরাষ্ট্র তাঁকে ক্রোড়ে নিয়ে মস্তক আঘ্রাণ ক’রে বললেন, ধর্মজ্ঞ, আমার ভাগ্যক্রমে তুমি ফিরে এসেছ, তোমার জন্য আমি দিবারাত্র অনিদ্রায় আছি, অসুস্থ বোধ করছি। যা বলেছি তার জন্য ক্ষমা কর। বিদুর বললেন, মহারাজ, আপনি আমার পরম গুরু, আপনাকে দেখবার জন্য আমি ব্যগ্র হয়ে সত্বর চ’লে এসেছি। আপনার আর পাণ্ডুর পুত্রেরা আমার কাছে সমান পাণ্ডবরা এখন দুর্দশাগ্রস্ত তাই আমার মন তাদের দিকে গেছে।
৩। ধৃতরাষ্ট্র-সকাশে ব্যাস ও মৈত্রেয়
বিদুর আবার এসেছেন এবং ধৃতরাষ্ট্র তাঁকে সান্ত্বনা দিয়েছেন শুনে দুর্যোধন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে কর্ণ শকুনি ও দুঃশাসনকে বললেন, পাণ্ডবদের যদি ফিরে আসতে দেখি তবে আমি বিষ খেয়ে, উদ্বন্ধনে, অস্ত্রাঘাতে বা অগ্নিপ্রবেশে প্রাণ বিসর্জন দেব। শকুনি বললেন, তুমি মূর্খের ন্যায় ভাবছ কেন? পাণ্ডবরা প্রতিজ্ঞা ক’রে গেছে, তারা সত্যনিষ্ঠ, তোমার পিতার অনুরোধে ফিরে আসবে না। কর্ণ বললেন, যদি ফিরে আসে তবে আবার দ্যূতক্রীড়ায় তাদের জয় করবেন। দুর্যোধন তুষ্ট হলেন না, মুখ ফিরিয়ে নিলেন। তখন কর্ণ বললেন, আমরা দুর্যোধনের প্রিয়কামনায় কেবল কিংকরের ন্যায় কৃতাঞ্জলি হ’য়ে থাকব, অথচ