পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
১৪৭

উপদেশ দিন। ব্যাস বললেন, ভগবান মৈত্রেয় ঋষি পাণ্ডবদের সঙ্গে দেখা ক’রে এখানে আসছেন, তিনিই দুর্যোধনকে উপদেশ দেবেন। এই ব’লে ব্যাস চ’লে গেলেন।

 মুনিশ্রেষ্ঠ মৈত্রেয় এলে ধৃতরাষ্ট্র অর্ঘ্যাদি দিয়ে তাঁর পূজা করলেন। মৈত্রেয় বললেন, মহারাজ, আমি তীর্থ পর্যটন করতে করতে কাম্যকবনে গিয়েছিলাম, সেখানে ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। আমি শুনলাম আপনার পুত্রদের বিভ্রান্তির ফলে দ্যূতরূপে মহাভয় উপস্থিত হয়েছে। আপনি আর ভীষ্ম জীবিত থাকতে আপনার পুত্রদের[১] মধ্যে বিরোধ হওয়া উচিত নয়। দ্যূতসভায় দস্যুবৃত্তির ন্যায় যা ঘটেছে তাতে আপনি তপস্বীদের সমক্ষে আর মুখ দেখাতে পারেন না। তার পর মৈত্রেয় মিষ্টবাক্যে দুর্যোধনকে বললেন, মহাবাহু, আমি তোমার হিতের জন্য বলছি শোন, পাণ্ডবদের সঙ্গে বিরোধ ক’রো না। তাঁরা সকলেই বিক্রমশালী সত্যব্রত ও তেজস্বী এবং হিড়িম্ব বক প্রভৃতি রাক্ষসগণের হন্তা। ব্যাঘ্র যেমন ক্ষুদ্র মৃগকে বধ করে সেইরূপ বলিশ্রেষ্ঠ ভীম কির্মীর রাক্ষসকে বধ করেছেন। আরও দেখ, দিগ্‌বিজয়ের পূর্বে ভীম মহাধনুর্ধর জরাসন্ধকেও যুদ্ধে নিহত করেছেন। বাসুদেব যাঁদের আত্মীয়, ধৃষ্টদ্যুম্নাদি যাঁদের শ্যালক, তাঁদের সঙ্গে কে যুদ্ধ করতে পারে? রাজা দুর্যোধন, তুমি পাণ্ডবদের সঙ্গে শান্ত আচরণ কর, আমার কথা শোন, ক্রোধের বশবর্তী হয়ো না।

 দুর্যোধন তাঁর ঊরুতে চপেটাঘাত করলেন এবং ঈষৎ হাস্য ক’রে অধোবদনে অঙ্গুষ্ঠ দিয়ে ভূমিতে রেখা কাটতে লাগলেন। দুর্যোধনের এই অবজ্ঞা দেখে মৈত্রেয় ক্রোধে রক্তলোচন হলেন এবং জলস্পর্শ করে অভিশাপ দিলেন, তুমি আমার কথা অগ্রাহ্য করছ, এই অহংকারের ফল শীঘ্রই পাবে, মহাযুদ্ধে গদাঘাতে ভীম তোমার ঊরু ভগ্ন করবেন। ধৃতরাষ্ট্র প্রসন্ন করবার চেষ্টা করলে মৈত্রেয় বললেন, রাজা, দুর্যোধন যদি শান্তভাবে চলে তবে আমার শাপ ফলবে না, নতুবা ফলবে। ধৃতরাষ্ট্র জিজ্ঞাসা করলেন, কির্মীরকে ভীম কি করে বধ করেছেন? মৈত্রেয় উত্তর দিলেন, আমি আর কিছু বলব না, আপনার পুত্র আমার কথা শুনতে চায় না। আমি চ’লে গেলে বিদুরের কাছে শুনবেন।

  1. পাণ্ডবরাও ধৃতরাষ্ট্রের পুত্ররূপে গণ্য।