পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
১৫১

দেবী, রোদন ক’রো না, মধুসূদন যা বললেন তার অন্যথা হবে না। ধৃষ্টদ্যুম্ন বললেন, আমি দ্রোণকে বধ করব; শিখণ্ডী ভীষ্মকে, ভীমসেন দুর্যোধনকে এবং ধনঞ্জয় কর্ণকে বধ করবেন। ভগিনী, বলরাম আর কৃষ্ণকে সহায় রূপে পেলে আমরা ইন্দ্রের সঙ্গে যুদ্ধেও অজেয় হব।

 কৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরকে বললেন, মহারাজ, আমি যদি দ্বারকায় থাকতাম তবে আপনাদের এই কষ্ট হ’ত না। আমাকে না ডাকলেও আমি কুরুসভায় যেতাম এবং ভীষ্ম দ্রোণ ধৃতরাষ্ট্র প্রভৃতিকে বুঝিয়ে দ্যূতক্রীড়া নিবারণ করতাম। ধৃতরাষ্ট্র যদি মিষ্ট কথা না শুনতেন তবে তাঁকে সবলে নিগৃহীত করতাম, সুহৃদবেশী শত্রু, দ্যূতকারগণকে বধ করতাম। আমি দ্বারকায় ফিরে এসে সাত্যকির কাছে আপনার বিপদের কথা শুনে উদ্‌বিগ্ন হয়ে আপনাকে দেখতে এসেছি। হা, আপনারা সকলেই বিষাদসাগরে নিমগ্ন হয়ে কষ্ট পাচ্ছেন।

৬। শাল্ববধের বৃত্তান্ত — দ্বৈতবন

 যুধিষ্ঠির জিজ্ঞাসা করলেন, কৃষ্ণ, তুমি দ্বারকা ছেড়ে কোথায় গিয়েছিলে? তোমার কি প্রয়োজন ছিল?

 কৃষ্ণ বললেন, আমি শাল্ব রাজার সৌভনগর বিনষ্ট করতে গিয়েছিলাম। আপনার রাজসূয় যজ্ঞে আমি শিশুপালকে বধ করেছি শুনে শাল্ব ক্রুদ্ধ হয়ে দ্বারকাপুরী আক্রমণ করেন। তিনি তাঁর সৌভবিমানে ব্যূহ রচনা করে আকাশে অবস্থান করলেন। এই বৃহৎ বিমানই তাঁর নগর। যাদববীরগণ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে দ্বারকাপুরী সর্বপ্রকারে সুরক্ষিত করলেন। উগ্রসেন[১] উদ্ভব[২] প্রভৃতি ঘোষণা করলেন, কেউ সুরাপান করতে পাবে না। আনর্ত[৩] দেশবাসী নট নর্তক ও গায়কগণকে অন্যত্র পাঠানো হল। সমস্ত সেতু ভেঙে দেওয়া হ’ল এবং নৌকার যাতায়াত নিষিদ্ধ হ’ল। সৈন্যদের বেতন খাদ্য ও পরিচ্ছদ দিয়ে সন্তুষ্ট করা হ’ল। শাল্বের চতুরঙ্গিণী সেনা সর্বদিক বেষ্টন ক’রে দ্বারকা অবরুদ্ধ করলে। তখন চারুদেষ্ণ প্রদ্যুম্ন শাম্ব[৪] প্রভৃতি বীরগণ রথারোহণে শাল্বের সম্মুখীন হলেন। জাম্ববতীপুত্র শাম্ব শাল্বের সেনাপতি ক্ষেমবৃদ্ধির সঙ্গে যুদ্ধ করতে লাগলেন। ক্ষেমবৃদ্ধি আহত হয়ে পালিয়ে গেলে বেগবান নামে এক দৈত্য শাম্বকে আক্রমণ


  1. ইনি কংসের পিতা এবং দ্বারকার অভিজাততন্ত্রের অধিনায়ক বা প্রেসিডেণ্ট।
  2. কৃষ্ণের এক বন্ধু।
  3. দ্বারকার নিকটস্থ দেশ।
  4. এঁরা তিনজনেই কৃষ্ণপুত্র।