পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৮
মহাভারত

পড়েছেন, ক্ষত্রিয়কুলে কেন আপনি জন্মেছেন? আমরা তের মাস বনে বাস করেছি, ভেবে দেখুন তের বৎসর কত বৃহৎ। মনীষীরা বলেন, সোমলতার প্রতিনিধি যেমন পূতিকা (পুঁই শাক), সেইরূপ বৎসরের প্রতিনিধি মাস। আপনি তের মাসকেই তের বৎসর গণ্য করুন। যদি এইরূপ গণনা অন্যায় মনে করেন তবে একটা সাধুস্বভাব ষণ্ডকে প্রচুর আহার দিয়ে তৃপ্ত করুন, তাতেই পাপমুক্ত হবেন।

 যুধিষ্ঠির বললেন, উত্তমরূপে মন্ত্রণা আর বিচার করে যদি বিক্রম প্রয়োগ করা হয় তবেই সিদ্ধিলাভ হয়, দৈবও তাতে অনুকূল হন। কেবল বলদর্পে চঞ্চল হয়ে কর্ম আরম্ভ করা উচিত নয়। দুর্যোধন ও তার ভ্রাতারা দুর্ধর্ষ এবং অস্ত্রপ্রয়োগে সুশিক্ষিত। আমরা দিগ্‌বিজয়কালে যেসকল রাজাদের উৎপীড়িত করেছি তাঁরা সকলেই কৌরবপক্ষে আছেন। ভীষ্ম দ্রোণ কৃপ পক্ষপাতহীন, কিন্তু অন্নদাতা ধৃতরাষ্ট্রের ঋণ শোধ করবার জন্য তাঁরা প্রাণ বিসর্জন দিতেও প্রস্তুত হবেন। কোপনস্বভাব সর্বাস্ত্রবিশারদ অজেয় অভেদ্যকবচধারী কর্ণও আমাদের উপর বিদ্বেষযুক্ত। এই সকল পুরুষশ্রেষ্ঠকে জয় না ক’রে তুমি দুর্যোধনকে বধ করতে পারবে না।

 যুধিষ্ঠিরের কথা শুনে ভীমসেন বিষণ্ণ হয়ে চুপ করে রইলেন। এমন সময় মহাযোগী ব্যাস সেখানে উপস্থিত হলেন এবং যুধিষ্ঠিরকে অন্তবালে নিয়ে গিয়ে বললেন, ভরতসত্তম, তোমাকে আমি প্রতিস্মৃতি নামে বিদ্য। দিচ্ছি, তার প্রভাবে অর্জুন কার্যসিদ্ধি করবে। অস্ত্রলাভ করবার জন্য সে ইন্দ্র রুদ্র বরুণ কুবের ও যমের নিকট যাক। তোমরাও এই বন ত্যাগ করে অন্য বনে যাও, এক স্থানে দীর্ঘ কাল থাকা তপস্বীদের উদ্‌বেগজনক, তাতে উদ্ভিদ-মৃগাদিরও ক্ষয় হয়। এই ব’লে ব্যাস অন্তর্হিত হলেন। যুধিষ্ঠির প্রতিস্মৃতি মন্ত্র লাভ করে অমাত্য ও অনুচরদের সঙ্গে কাম্যকবনে গিয়ে বাস করতে লাগলেন।

৯। অর্জুনের দিবাস্ত্রসংগ্রহে গমন

 কিছুকাল পরে যুধিষ্ঠির অর্জুনকে বললেন, ভীষ্ম দ্রোণ কৃপ কর্ণ ও অশ্বত্থামা— এঁরা সমগ্র ধনর্বেদে বিশারদ, দুর্যোধন এঁদের সম্মানিত ও সন্তুষ্ট করেছে। সমস্ত পৃথিবীই এখন তার বশে এসেছে। তুমি আমাদেন প্রিয়, তোমার উপরেই আমরা নির্ভর করি। বৎস, আমি ব্যাসদেবের নিকট একটি মন্ত্র লাভ করেছি, তুমি তা শিখে নিয়ে উত্তর দিকে গিয়ে কঠোর তপস্যা কর। সমস্ত দিব্যাস্ত্র ইন্দ্রের কাছে আছে, তুমি তাঁর শরণাপন্ন হয়ে সেই সকল অস্ত্র লাভ কর।