পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৬
মহাভারত

বললেন, সুরক্ষিত অন্তঃপুরে আমি কি ক’রে প্রবেশ করব? ইন্দ্র বললেন, তুমি প্রবেশ করতে পারবে।

 সখীগণে পরিবেষ্টিত দময়ন্তীর কাছে নল উপস্থিত হলেন। দময়ন্তী স্মিতমুখে বললেন, সর্বাঙ্গসুন্দর, তুমি কে? আমার হৃদয় হরণ করতে কেন এখানে এসেছ? নল বললেন, কল্যাণী, আমি নল, ইন্দ্র অগ্নি বরুণ ও যম এই চার দেবতার দূত হয়ে তোমার কাছে এসেছি, তাঁদের একজনকে পতিরূপে বরণ কর। দময়ন্তী বললেন, রাজা, আমি এবং আমার যা কিছু আছে সবই তোমার, তুমিই আমার প্রতি প্রণয়শীল হও। হংসদের কাছে সংবাদ পেয়ে তোমাকে পাবার জন্যই আমি স্বয়ংবরে রাজাদের আনিয়েছি। তুমি যদি আমাকে প্রত্যাখ্যান কর তবে বিষ অগ্নি জল বা রজ্জুর দ্বারা আত্মহত্যা করব। নল বললেন, দেবতারা থাকতে মানবকে চাও কেন? আমি তাঁদের চরণধূলির তুল্যও নই, তাঁদের প্রতিই তোমার মন দেওয়া উচিত। দময়তী অশ্রুপ্লাবিতনয়নে কৃতাঞ্জলি হয়ে বললেন, দেবগণকে প্রণাম করি; মহারাজ, আমি তোমাকেই পতিত্বে বরণ করব। নল বললেন, কল্যাণী, আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে দেবগণের দূত রূপে এসেছি, এখন স্বার্থসাধন কি ক’রে করব? দময়ন্তী বললেন, আমি নির্দোষ উপায় বলছি শোন। ইন্দ্রাদি লোকপালগণের সঙ্গে তুমিও স্বয়ংবর সভায় এস, আমি তাঁদের সম্মুখেই তোমাকে বরণ করব।

 নল ফিরে এসে দেবগণকে বললেন, আমি আপনাদের বার্তা দময়ন্তীকে জানিয়েছি, কিন্তু তিনি আমাকেই বরণ করতে চান। তিনি আপনাদের সকলকে এবং আমাকেও স্বয়ংবরসভায় আসতে বলেছেন।

 বিদর্ভরাজ ভীম শুভদিনে শুভক্ষণে স্বয়ংবরসভা আহ্বান করলেন। নানা দেশের রাজারা সুগন্ধ মাল্য ও মণিকুণ্ডলে ভূষিত হয়ে আসনে উপবিষ্ট হলেন। দময়ন্তী সভায় এলে তাঁর দেহেই রাজাদের দৃষ্টি লগ্ন হয়ে রইল, অন্যত্র গেল না। অনন্তর রাজাদের নামকীর্তন আরম্ভ হ’ল। দময়ন্তী তখন দেখলেন, তাঁদের মধ্যে পাঁচজনের আকৃতি একই প্রকার, প্রত্যেককেই নল বলে মনে হয়। দময়ন্তী ভাবতে লাগলেন, এঁদের মধ্যে কে দেবতা আর কে নল তা কোন্ উপায়ে বুঝব? বৃদ্ধদের কাছে দেবতার যেসব লক্ষণ শুনেছি তা এই পাঁচজনের মধ্যে কারও দেখছি না। তখন দময়ন্তী কৃতাঞ্জলি হয়ে দেবগণের উদ্দেশে নমস্কার ক’রে বললেন, আমি হংসগণের বাক্য শুনে নিষধরাজকে পতিত্বে বরণ করেছি, আমার সেই সত্য যেন রক্ষা পায়। দেবগণ নলকে দেখিয়ে দিন, তাঁরা নিজরূপ ধারণ করুন যাতে আমি নলকে চিনতে পারি।