পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
১৭৩

শিখে নিয়ে আপনাকে অক্ষহৃদয়[১] দান করবেন। ঋতুপর্ণ আপনার সখা হবেন, আপনিও দ্যূতক্রীড়ায় পারদর্শী হয়ে শ্রেয়োলাভ করবেন এবং পত্নী পুত্রকন্যা ও রাজ্য ফিরে পাবেন। যখন পূর্বরূপ ধারণের ইচ্ছা হবে তখন আমাকে স্মরণ করে এই বসন পরিধান করবেন। এই ব’লে কর্কোটক নলকে দিব্য বস্ত্রযুগল দান করে অন্তর্হিত হলেন।

 দশ দিন পরে নল ঋতুপর্ণ রাজার কাছে এসে বললেন, আমার নাম বাহুক, অশ্বচালনায় আমার তুল্য নিপুণ লোক পৃথিবীতে নেই। সংকটকালে এবং কোনও কার্যে নৈপণ্যের প্রয়োজন হ’লে আমি মন্ত্রণা দিতে পারব, রন্ধনবিদ্যাও আমি বিশেষরূপে জানি। সর্বপ্রকার শিল্প ও দূরূহ কার্য সম্পাদনেও আমি যত্নশীল হব। ঋতুপর্ণ বললেন, বাহুক, তুমি আমার কাছে থাক, তোমার ভাল হবে। দশ সহস্র মুদ্রা বেতনে তুমি আমার অশ্বাধ্যক্ষ নিবৃত্ত হ’লে বার্ষ্ণেয়[২] ও জীবল[৩] তোমার সেবা করবে।

 ঋতুপর্ণের আশ্রয়ে নল সসম্মানে বাস করতে লাগলেন। দময়ন্তীকে স্মরণ ক’রে তিনি প্রত্যহ সায়ংকালে এই শ্লোক বলতেন—

ক্ব নু সা ক্ষুৎপিপাসার্তা শ্রান্তা শেতে তপস্বিনী।
স্মরন্তী তস্য মন্দস্য কং বা সাঽদ্যোপতিষ্ঠতি॥

— সেই ক্ষুৎপিপাসার্তা শ্রান্তা দুঃখিনী আজ কোথায় শুয়ে আছে? এই হতভাগ্যকে স্মরণ করে সে আজ কার আশ্রয়ে বাস করছে?

 একদিন জীবল বললে, বাহুক, কোন্ নারীর জন্য তুমি নিত্য এরূপ বিলাপ কর? নল বললেন, কোনও এক মন্দবুদ্ধি পুরুষ ঘটনাক্রমে তার অত্যন্ত আদরণীয়া পত্নীর সহিত বিচ্ছেদের ফলে শোকে দগ্ধ হয়ে ভ্রমণ করছে। নিশাকালে তার প্রিয়াকে স্মরণ ক’রে সে এই শ্লোক গান করে। সেই পতিপরিত্যক্তা বালা ক্ষুৎপিপাসায় কাতর হয়ে একাকী শ্বাপদসংকুল দারুণ বনে বিচরণ করছে, হায়, তার জীবনধারণ দুষ্কর।

১৭। পিত্রালয়ে দময়ন্তী ― নল-ঋতুপর্ণের বিদর্ভ যাত্রা

 বিদভরাজ ভীম তাঁর কন্যা ও জামাতার অন্বেষণের জন্য বহুউ ব্রাহ্মণ নিযুক্ত করলেন। তাঁরা প্রচুর পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি পেয়ে নানা দেশে নল-দময়ন্তীকে

  1. ‘হৃদয়’এর অর্থ গুপ্তবিদ্যা, অর্থাৎ অশ্বচালনায় বা অক্ষক্রীড়ায় অসাধারণ নৈপুণ্য।
  2. ১৪-পরিচ্ছেদে উক্ত নল-সারথি।
  3. ঋতুপর্ণের পূর্বসারথি।